ওয়াইসী (রহঃ) এর পীর সূফী নূর মোহাম্মদ নিজামপুরী (রহঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

তারপর সাইয়েদ নূর মোহাম্মদ নিজামপুরী (রহঃ) তাঁহার পীর হযরত সূফী সাইয়েদ আহমাদ বেলরভির সান্নিধ্যে দীর্ঘকাল থাকেন। রাজা রঞ্জিৎ সিং ব্রিটিশদের সাথে হযরত সাইয়েদ শাহীদ আহমাদ বেলরভী যুদ্ধ করেন। সর্বশক্তিমান আল্লাহর কৃপায় তিনি প্রভুত শক্তির অধিকারী হন। ফলে চতুর্দিক থেকে প্রাপ্ত অস্ত্রে তিনি হয়ে ওঠেন বলীয়ান। শক্রর বিরুদ্ধে তাঁহার হাতের অস্ত্র তিনি প্রয়োগ করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি সব্যসাচীর মত নিজের জায়গায় স্থির ছিলেন। কিন্তু কোন এক যুদ্ধে দুর্ভাগ্যবশত তাঁহার বাম হাত অকেজো হয়ে যায়। তাঁহার পীর হযরত সাইয়েদ আহমাদ বেলরভি পাঞ্জাবের যুদ্ধে শহীদ হন, সঙ্গে হযরত ওয়াইসী পীরের পিতা ও শহীদ হন। তাঁহার পীরের সহযোগী হিসেবে তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় স্বাধীনতা সংগ্রাম ও যুদ্ধে অতিবাহিত করেন। এজন্য তিনি বিবাহ করার সময় পাননি। আজীবন তিনি চিরকুমার থেকে যান। তাঁহার জীবনে অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটে।

ব্রিটিশ সরকার তাঁহাকে বহুবার গ্রেপ্তার করতে সচেষ্টা হয় কিন্তু অলৌকিক ঐশ্বরিক শক্তি বলে প্রতিবারই রক্ষা পান। হযরত সূফী নূর মোহাম্মদ নিজামপুরীর অলৌকিক শক্তিতে ইংরেজ সরকার ভীত হয়ে পড়ে। জুম্মার নামাজের দিনে মসজিদে ‘খোদবা’র (শুক্রবার) সময় তিনি জনসাধারণকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেন। ইংরেজ সরকারের চোখকে ফাঁকি দেবার জন্য তিনি প্রায়ই গৃহ বদল করতেন। তাঁহার এক দত্তক পুত্র ছিল নাম আব্দুল্লাহ।

হযরত সূফী নূর মোহাম্মদ নিজামপুরী দেহ ত্যাগ করে ১২৭৫ হিজরি, ১৮৫৮ খ্রীষ্টাব্দ ১৩ই কার্তিক ১২৬৬ বঙ্গাব্দে। হযরত সূফী নূর মোহাম্মদ নিজামপুরীর দেহ সমাধিস্থ করা হয় চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত মিরেশ্বরাই এর মালিয়াস গ্রামে। তাঁহার নামানুসারে মাজার শরীফের রাস্তা বর্তমানে সুফীয়া রোড নামে পরিচিত। এই পথ ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের প্রধান সড়ক ধরে মিরেশ্বরাই হয়ে মাজার শরীফের সঙ্গে মিলে গেছে। মিরেশ্বরাইতে বাংলাদেশ সরকার তার নামে একটি সুন্দর তোরণ নির্মাণ করে দিয়েছেন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবার পথে মিরেশ্বরাইতে এই তোরণদ্বার দেখা যায়।

হযরত সূফী নূর মোহাম্মদ নিজামপুরীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ খলিফা হলেন হযরত সূফী সাইয়েদ ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ)। প্রতি বৎসর ১৩ কার্তিক হযরত সূফী নূর মোহাম্মদ নিজামপুরী (রহঃ) এর উরস মোবারক উদযাপিত হয়ে আসছে তাঁহার মাজার শরীফ প্রাঙ্গনে। তাঁহার আরও বহ খলিফা আছে। দেশ-বিদেশ থেকে বহু ওলামা মাসায়েখ ভক্তরা উরস উপলক্ষে তাঁহার স্মরণ সভায় সমবেত হন।

Additional information