ওয়াইসী (রহঃ) এর ব্যাক্তিগত জীবন

ওয়াইসী (রহঃ) এর ব্যাক্তিগত জীবনঃ

হযরত শাহ্ সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) এর চেহার ছিল অতি আকর্ষণীয়। তাঁহার গায়ের রং ছিল উজ্জ্বল দীর্ঘ, সুঠাম স্বাস্থ্য, আয়ত চক্ষু, সুতীক্ষ নাসা, ঘন দাড়ি মুখের সঙ্গে মানানসই। তাঁহার দাঁত ছিল সুন্দর ও যথাযর্থ। তাঁহার মাথা ভর্তি কালো কেশ। তাঁহার মাথা ও দেহের সঙ্গে ছিল সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁহার শরীর যেরূপ ছিল কল্পনাময় সেইরূপ অনন্য। সমগ্র জীবন তিনি কখনও অসুস্থ হন নি।

ফুল ও আতর ছিল তাঁহার অতিপ্রিয়। কখনও অনাবশ্যক কথা তিনি বলতেন না, পায়ে থাকত নাগরাই জুতো। কোরআন শরীফ এবং হাদিস শরীফের সমস্ত বিষয় ছিল তাঁহার কন্ঠস্থ। শুধু কোরআন ও হাদিস নয় তাঁহার পরে যত বোজর্গগানে দীনেরা যা যা কেতাব লিখে গেছেন প্রায় সবই তাঁহার জ্ঞান গরিমায় আয়ত্ব করেছিলেন। আগেই বলেছি নিজস্ব পরিবারের জমিদারী শ্বশুর ও নানা শ্বশুরের জমিদারীর মালিক তিনি হন, কিন্তু অর্থ ও সম্পত্তিতে তাঁহার কোন লোভ ছিল না। ওদিকে তিনি ঘুরেও তাকাননি। তিনি ছিলেন আনন্দময় ও বুদ্ধিদীপ্ত এবং পরিশ্রমী স্বভাবের। আল্লাহ্ ব্যতীত তিনি আর কাউকে ভয় করতেন না। তিনি খুব অধ্যাবসায়ী ও সাহসী ছিলেন। তিনি তাঁহার পরিবার, প্রতিবেশী পল্লীতে খুব প্রিয় ছিলেন। তিনি ভৃত্যদের পুত্রবৎ স্নেহ করতেন। ভৃত্যদের প্রতি তাঁহার ছিল অসীম দয়া ও ভালোবাসা।

তিনি শিষ্যদের নিজের নিকট রাখতেন তাদের খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতেন। তিনি নিজ ব্যয়ে দরিদ্র ও অভাবী শিষ্যদের আধ্যাত্মিক জীবন যাপনে সাহায্য করতেন।


যদি কেহ অসুস্থ হয়ে পড়ত তবে তিনি তাকে দেখতে যেতেন এবং তাঁহার রোগমুক্তির জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতেন, সম্ভব হলে তাঁর জানাজায় অংশ নিতেন। তিনি রবিবার অথবা ছুটির দিন কখনও বেতন গ্রহণ করেন নি। নির্জন স্থানে আল্লাহর কাছে মানুষের মঙ্গল কামনায় তিনি অশ্রু বিসর্জন করতেন। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর ন্যায় তাঁহার জীবনী চর্যা ছিল অনুরূপ।

সে যুগে ধনী, দরিদ্র, নবাবজাদারা সহ সকলেই ভক্ত ছিল। যিনি আল্লাহর রাসূলপ্রেমিক তাকে পৃথিবীর কোন মোহ আটকাতে পারে না। আর তিনি নিজেও ছিলেন মুর্শিদাবাদের অলিখত নবাব বা সুলতান।

তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন অতি খ্যাতিমান পুরুষ ছিলেন। এজন্য বহু জ্ঞানীগুনী ও ধার্মিক ব্যক্তি তাঁহার সঙ্গে রেখেছিলেন ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। সে সময় বাংলার সমস্ত প্রগতিশীল জনহিতকর কাজে কম বেশী তাঁহার অবদান ছিল। তিনি শহীদ টিপু সুলতান সহ দেশের সমস্ত নবাবজাদাদের উপদেষ্টা ছিলেন এবং তাঁহারা সর্বদা তাঁহার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংযোগ রক্ষা করে চলতেন। টিপু সুলতানের পরিবারের সঙ্গে তাঁহার সুসস্পর্ক থাকায় টালিগঞ্জে টিপু সুলতানের গৃহে তাঁহার ছিল অবাধ প্রবেশাধিকার এবং দেশের সমস্ত নবাবজাদাদের ও দেশ ও জাতির কল্যানকামী মানুষের সঙ্গে ছিল তাঁহার নিবিড় যোগাযোগ।

Additional information