ওয়াইসী ক্বেবলা কা’বা (রহঃ) এর আকৃতি, প্রকৃতি ও স্বভাব চরিত্র

ওয়াইসী ক্বেবলা কা’বা (রহঃ) এর আকৃতি, প্রকৃতি ও স্বভাব চরিত্র 

হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়েদ ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) ক্বেবলা কা’বা অতীব স্বাস্থ্য সুন্দর, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের ও নাতিদীর্ঘ ছিলেন। মধ্যস্থলে ঈষৎ ব্যবধান রাখিয়া  ভ্রু-যুগল জোড়া ছিল তাঁহার। বক্ষ ও উভয় স্কন্ধ প্রশস্ত ছিল। চক্ষু ছিল আয়াত এবং নাসিকা মানানসই উন্নত ছিল। চিবুক ছিল ঘন চাপ শশ্রু আচ্ছাদিত। দন্তগুলি ছিল মুক্তা-পাঁতিসম সুশৃঙ্খল, দৃঢ়, সুন্দর ও ঝকঝকে। মস্তক দেহের সঙ্গে বড়ই মানানসই ছিল। সারা মস্তক ছিল চুলে আবৃত।

তাঁহার সমগ্র জীবনকালে কোন প্রকার পীড়া বিন্দুমাত্র তাঁহাকে আক্রমণ করেনি। পৌষ মাঘের প্রচন্ড শীতের রাত্রেও মাত্র পাতলা কুর্তা পরিধান করিয়া, কখনও বা কেবলমাত্র একখানা পাতলা চাদরে গাত্র আবৃত করিয়া উন্মুক্ত ছাদে দীর্ঘ সময় প্রভু বন্দনায় নিমগ্ন রহিতেন।

প্রয়োজন বোধে তিনি মুচকিয়া হাসিতেন, কখনও অট্টহাস্য করেন নাই। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাক্যলাপ হইতে সতত বিরত রহিতেন। ধীরে ও স্পষ্টভাবে কথা কহিতেন। তিনি সর্বদা সাধারণ পোষাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করিতেন। কদাপি আড়ম্বরপূর্ণ বস্ত্রাদি পরিধান করিতেন না। কেবলমাত্র দুই ঈদ-মোবারকে শিরওয়ানী ও চোগা পরিধান করিতেন। পায়ে পরিতেন নাগরা জুতা। মাথায় ব্যবহার করিতেন কাদেরী টুপি।

আতর ও ফুল তাঁহার বিশেষ আদরনীয় ছিল। একশত মোটা দানার তসবিহ (জপমালা) ব্যবহার করিতেন। নিজ হস্তের নকল করা কোরআন শরীফ পাঠ করিতেন। তিনি ছিলেন পবিত্র কোরআন হাফেজ ও ক্কারী। কোরআন শরীফ দ্রুত, শুদ্ধ, স্পষ্ট ও সুমিষ্ট স্বরে পাঠ করিতে পারিতেন। সমগ্র হাদিস শরীফ তাঁহার কন্ঠস্থ ছিল। কোন হাদিস শরীফটি সহি, কোনটি সঠিক নহে এ বিষয়ে তাঁহার ছিল প্রগাঢ় জ্ঞান ও অন্তর-দৃষ্টি।

বিলাসিতা, অপব্যয় ও আলস্য ছিল তাঁহার অজানা। তিনি ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী, অতীব মেধাবী, বিস্ময়কর শ্রুতিধর ও সংযমী। এক আল্লাহ্ তালা ব্যতিরেকে কাহাকেও ভয় করিতেন না। তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা ও নির্ভীক। অথচ তিনি ছিলেন প্রকৃত ইসলামিক সাম্যবাদী, মানব-দরদী, করুণা-কাতর এবং আল্লাহ্ পাকের নিখিল সৃষ্টির প্রতি দয়ালু। প্রতি শুক্রবার প্রভাতের মিষ্টি অন্ন করিয়া গৃহের ছাদে ও অঙ্গনে স্বহস্তে ছিটাইয়া দিয়া ক্ষুধিত বিহঙ্গকুলকে ভক্ষণ করাতেন। গৃহের ও পাড়ার কুকুর-বিড়ালকে তিনি আপন খাদ্য হইতে সর্ব্বদাই আহার দান করিতেন। তিনি অকাতরে শ্রাবণের ধারায় মত দীন-দুঃখী, পাড়া প্রতিবেশী ও দরিদ্র, অসহায় আত্মীয়-স্বজনকে হৃদচিত্তে অর্থ খাদ্য পরিচ্ছেদ ও আশ্রয় দান করিতেন। ছোট ছোট শিশুগণকে স্বহস্তে মিঠাই খরিদ করিয়া দিতেন। হিন্দু, মুসলিম, খ্রীষ্টান, পরিচিত যে কেহ তাঁহার নিকট দানের প্রত্যাশায় আসিয়া শূন্য হাতে ফিরিত না, আশার অতিরিক্ত লাভ করিত।

আপন পরিজন-পরিবার বর্গের প্রতি তিনি ছিলেন গভীর, আন্তরিক স্নেহ ও সহানুভূতিশীল। তিনি স্ত্রী-পুত্র কন্যাগণের সুখ-সাচ্ছন্দের দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখিতেন। দুই ঈদে তাঁহাদিগকে নতুন বস্ত্রাদি খরিদ করিয়া দিতেন। পুত্র কন্যাগণকে কলকাতায় রাখিয়া উপযুক্ত উচ্চ শিক্ষিত ধার্মিক আলেম দ্বারা ও স্বয়ং নিজে তালিম দিয়া সর্ব্ব শাস্ত্রে এবং আরবী, ফার্সী উর্দ্দু, ইংরেজী ও বাংলা ভাষায় উত্তম সুশিক্ষিত ও উপযুক্ত করিয়াছিলেন। নিজে পুত্র-কন্যা ও স্ত্রীকে তাসাউফ পথের নিগুঢ় সন্ধান দিয়াছিলেন ও পবিত্র কোরআন হাদিস এবং অন্যান্য শাস্ত্রেও নানা বিষয়ে বিপুল জ্ঞান দান করিয়াছিলেন। গৃহ ভৃত্য ও দাসীগণকে তিনি পুত্রসম পালন করিতেন ও সমচক্ষে সর্বদাই দেখিতেন। তাহাদের প্রতি অশেষ দরদী ছিলেন।

তিনি দরিদ্র ও দুরান্তরের মুরিদগণকে নিজ কাছে রাখিয়া খাওয়াইয়া পরাইয়া,আশ্রয় দিয়া ত্বরিকতের শিক্ষা দিতেন। তাঁহাদের শিক্ষা শেষে গৃহে ফিরিবার পথ-খরচও তাঁহাদিগকে দান করিতেন। বহু বিধবার গ্রাসাচ্ছাদনের তিনি ছিলেন মুখপাত্র। বহু পিতৃ- মাতৃহীন, আশ্রয়হারা তাঁহার প্রদত্ত অর্থে বিদ্যা শিক্ষা করিয়া জীবনে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। চাকুরী করিয়া প্রচুর অর্থ উপার্জন করিয়াও দুনিয়ার বুকে বিশেষ কিছুই সম্পত্তি রাখিয়া যান নাই। কলকাতার বুকে একটি সম্পত্তিও খরিদ করেন নাই। পুনাসি গ্রামেও সামান্য পুকুর-বাগান, কিছু ধানক্ষেত ও একটি সাধারণ একতালা কুঠি ছাড়া এবং সামান্য জমিদারি স্বত্ব ছাড়া আর কিছুই ক্রয় করেন নাই। এ সমস্তই তাঁহার পূণ্যবর্তী সহধমির্নীর নামে খরিদ করিয়াছিলেন। উপার্জনের সমুদয় অর্থ মানুষের কল্যাণ করিতে করিতে নিঃশেষে শেষ করিয়া দিয়াছিলেন।

গরীব ভদ্রলোকদের প্রতি তিনি অতীব সহানুভূতিশীল ছিলেন। গোপনে তাঁহারদিগকে অর্থ, বস্ত্রাদী এবং খাদ্য দান করিতেন।

আপন পীরের প্রতি তিনি খুব মহব্বত রাখিতেন। কাদেরী, চিশতী, নকশেবন্দী ও মুজাদ্দেদী ত্বরিকার সর্দার পীর ক্বেবলাগণের বংশধরগণের প্রতি তিনি বড়ই স্নেহশীল ছিলেন। তাঁহাদিগকে বিশেষ সম্মান দান করিতেন। তাঁহাদের কেহ তাঁহার ভবনে উপস্থিত হইলে তিনি তাঁহাদের রাজকীয় খাদ্য, শস্য ও সম্মান দান করিতেন এবং তাঁহাদের সঙ্গে একাসনে আহার করিতেন।

ইটের ঝামা দ্বারা পদযুগল পরিস্কার করা ও করানো তাঁহার অভ্যাস ছিল। প্রায় তিনি আপন হস্ত দ্বারা আপন চরণদ্বয় চিপিতেন। মিসওয়াক করা ও সর্বদা অজু অবস্থায় থাকা তাঁহার প্রিয়তম অভ্যাস ছিল। সমগ্র জীবন কালের মধ্যে কথনও তহজ্জুদ নামাজ তিনি ত্যাগ করেন নাই। তাঁহার কন্ঠস্বর সুমিষ্ট, গম্ভীর, মর্মস্পর্শী ছিল। তিনি সতত সকলকে সঠিক ও সত্যকথা বলিতে উপদেশ দিতেন। তিনি বলিতেন মিথ্যা কথা মানব জীবনের ইহ-পরকালকে ধ্বংস করে, মিথ্যা সমগ্র কু-ক্রিয়ার উৎস। তিনি সকলকে ইসলামিক বিদ্যা অর্জন করিতে ও নানা ভাষা শিখিতে, শুদ্ধ পবিত্র থাকিতে, তাছাউফ-পথের হইতে, জাতীয় ইসলামিক পরিচ্ছদ পরিধান করিতে, স্বাবলম্বী, দানশীল ও মিতব্যয়ী হইতে, নম্র ও রিজু ভাষায় কথা বলিতে আদেশ করিতেন।

স্নেহ পীড়িত হইলে তাঁহাকে দেখিতে যাইতেন, শান্তনা দান করিতেন ও তাঁহার আরোগ্য প্রার্থনা করিতেন। কেহ মারা গেলে তাঁহার জানাযায় (শেষ কৃত্যে) শরীক হইতেন ও মগফেরাতের জন্য দোয়া করিতেন। কেহ তাঁহাকে সালাম দিবার আগেই তাঁহাকে সালাম প্রদান করিতেন। তিনি ছিলেন নিরাড়ম্বর, নিরহংকারী, নম্রভাবী।

তিনি অল্পাহারী ছিলেন। দুধ, আম, সেব ও বেদানা এবং কদু, শাক ও গুড় খাইতে পছন্দ করিতেন। পান খাওয়ার অভ্যাস তাঁহার ছিল। মাছ ও গোশত কখনও খালি খাইতেন না, কোন তরকারি সহযোগে মাছ-গোসত রন্ধন করাইয়া তাহা আহার করিতেন। ভাত ও রুটি উভয়ই খাইতে অভ্যস্ত ছিলেন। সমগ্র জীবনে যখনই পানি পান করিতেন তিন কুলির অধিক কখনও পান করেন নাই। কারবালার হৃদয় বিদারক স্মৃতি স্মরণ করিয়া প্রতিটি কুলি পান করার পর বুক ফাঁটা ‘আহ’ শব্দ উচ্চারণ করিতেন।

চাকুরী কার্য্যকালে তিনি রবিবারের ও ছুটির দিনগুলির মাহিনা গ্রহণ করিতেন না। কোন দিন নিজে ছুটি লইলে তাঁহারও মাহিনা ত্যাগ করিতেন। এ বিষয়ে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করা হইলে উত্তরে বলিয়াছিলেন, যখন তিনি ছুটির দিনে কার্য্য হইতে বিরত থাকেন তখন তাঁহার মাহিনা লওয়া বিবেক অনুযায়ী, শরিয়ত অনুযায়ী অনুচিত।

কখনও কোন মুরিদের নিকট হইতে তিনি নজরানা স্বরূপ নগদ টাকা কড়ি, সোনাদানা গ্রহণ করেন নাই। তবে খাদ্যাদি দিলে গ্রহণ করিতেন মুরিদের নিকট হইতে অর্থ লইতেন না বরং তিনি দরিদ্র-পীড়িত মুরিদগণকে যথেষ্ট অর্থ সাহায্য করিতেন।

গভীর আগ্রহ ও প্রেমের সহিত হযরত রাসূল পাকের (সাঃ) প্রতিটি সুন্নত ও চরিত্র ধারা তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে পালন করিয়া গিয়াছেন। তিনি ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর নায়বে রাসূলের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ কাব্যগন্থে তাঁহার ভূয়সী প্রমাণ রহিয়াছে। তিনি ছিলেন শরিয়ত ত্বরিকৎ মারেফত হকিকতের একটি পূর্ণচ্ছবি। উক্ত ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ মহাকাব্য গ্রন্থের পত্রে পত্রে ছত্রে ছত্রে তাঁহার প্রকৃত দৃষ্টান্ত দৃষ্ট হয়।

তিনি দক্ষিণহস্ত গালের নিচে স্থাপনপূর্বক দক্ষিণ-পার্শ্বে কেবলা মুখি হইয়া শয়ন করিয়া নিদ্র যাইতেন। রজনীর কিয়দংশ বাকী সারা নিশি জাগিয়া খোদার ধ্যানে নিমগ্ন রহিতেন। খোদা প্রাপ্তি পথে সমগ্র জীবন ধরিয়া তিনি কঠোর সাধনা করিয়া গিয়াছেন।

মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়া তিনি নিরালায় নীরবে আল্লাহ্ ভয়ে প্রকম্পিত কলেবরে ক্রন্দন করতেন এবং বিনীত কন্ঠে প্রার্থনা করিতেন যেন, করুণাময় তাঁহার অন্তর ও ওষ্ঠ বিভু-বন্দনায় হিন্দোলিত করিয়া ঈমানের সহিত মৃত্যু নসীব করেন; গোলাম যেন বাদশার রাতুল চরণ-প্রান্তে ক্লান্ত কপোল রাখিয়া লুটাইয়া পড়েন; জীবন শেষে যেন, জীবন দেবতার, মাবুদের দীদার (দর্শন) লাভ করেন। ইহাই ছিল তাঁহার দিন রজনীর আন্তরিক আকুল মোনাজাত।

তিনি প্রচুর পরিমাণে দরুদ শরীফ ও দোয়া আস্তাগফর পাঠ করিতেন। এশরাক, চাশত ও তহজ্জুদ নামাজ প্রাত্যহিক নামাজের ন্যায় প্রত্যহ সমাধা করিতেন। ওয়াক্তিয়া নামাজ মসজিদে জামাতসহ পড়িতেন। রমজান মাসে রোজা রাখিতেন, ঠিক সময়ে ইফতার করিতেন ও প্রত্যহ সেহরী গ্রহণ করিতেন। শবে ক্বদরে এতাকেফ করিতেন। সবে বরাত ও আশুরায় রোজা পালন করিতেন। মাঝে মাঝে অন্যান্য নফল রোজাও রাখিতেন। দুই ঈদে গোসল করিয়া পরিচ্ছদ পরিয়া আতর লাগাইয়া তকবীর পাঠ করিয়া ঈদগাহে গমন করিতেন। পবিত্র রমযানে, আশুরায় ও শবেবরাতে দানধ্যান করিতেন। আশুরায়, রমজানে, শবেবরাতে, আখেরী চাহারশোম্বাতে ও ফাতহো-য়াজ-দাহমে ও মিলাদ পড়ানো তাঁহার অভ্যাস ছিল।

তিনি লুঙ্গি ও পাজামা জেঙের উপর পরিধান করিতেন, তাঁহার কুর্তার, পীরানের ঝুল অধিক ছিল। চোখে সুরমা ব্যবহার করিতেন। তাঁহার আচার-ব্যবহার, পোশাক পরিচ্ছেদ, উঠা-বসা সমুদয় দৈনন্দিন কার্য্যকলাপ, তাঁহার জীবন-ধারা সম্পূর্ণ হযরত রাসূল করিম (সাঃ) অনুরূপ ছিল। তিনি আখেরী-জোহর নামাজ পড়িতেন। তিনি ওলি আল্লাহদের মাজার শরীফ জিয়ারত করিতে বড়ই আগ্রহী ছিলেন। তিনি তাঁহার কন্যা হযরত সাইয়েদা জোহরা খাতুন (রহঃ) সহ বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোর্ট গ্রামের হযরত শায়খ হামিদ বাঙ্গালীর (রহঃ) মাজার শরীফ জিয়ারত করিয়াছিলেন কয়েকবার। তিনি তাঁহার পুত্র-কন্যাগণকে শিক্ষায় দীক্ষায় অতি উন্নত করিয়া সুমহান, শ্রেষ্ঠ জীবন-অঙ্গনে প্রবেশ করাইয়াছিলেন এবং তাছাউফের সর্বশ্রেষ্ঠ তাওয়াজ্জুহ দিয়া তাছাউফের সুউচ্চ শিখরে আরোহণ করাইয়াছিলেন। তাঁহার উপযুক্ত পুণ্যবতী বহু গুণবিভূষিতা কন্যা হযরত সাইয়েদ জোহরা খাতুন (রহঃ) তাঁহার আধ্যাত্মিক স্পর্শে সর্বাপেক্ষা উন্নতি লাভ করিয়া কামালিয়তের শেষ মঞ্জিলে উপনীত হইয়া শ্রেষ্ঠ কতুবুল-আকতাব পদপ্রাপ্ত হইয়াছিলেন এবং দেরেমকনুন (গুপ্ত মতি) উপাধি পাইয়াছিলেন। তাঁহার অতি পুণ্যবতী ভার্ষ্যাও তাঁহার সংস্পর্শে কামালিয়তের সুউচ্চ শিখরে আরোহণ করিয়া বিশিষ্ট স্থান অধিকার করিয়াছিলেন। তাঁহার পুত্র হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ গোলাম মোস্তফা আলী (রহঃ) তাঁহার হস্তে বায়াত হইয়া কামালিয়ত ও বহু সুশিক্ষা লাভ করিয়াছিলেন।

পন্ডিতমন্ডলিও তাপস কুল তাঁহার সুমহান অতি উচ্চ জ্ঞান ও আধ্যাতিকতার স্পর্শে আসিয়া আপন আপন জীবনকে ধন্য মনে করেন। একে একে প্রত্যেকেই তাঁহার শিষ্যত্ব গ্রহণ করিয়া প্রসিদ্ধ জীবন লাভ করিয়াছিলেন ও প্রখ্যাাত পীরে পরিণত হইয়াছিলেন। কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয় এই সমস্ত বিদ্বজনমন্ডলির কোন তালিকা পাওয়া যায় নাই। হযরত সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী ক্বিবলার (রহঃ) রচিত দিওয়ানে ওয়াইসীতে প্রধান মুরিগণের নাম উল্লেখ আছে। মোল্লা সিমলা হযরত হাসান হালবীর (রহঃ) মাজার তিনি জিয়ারত করিয়াছিলেন।

চাকুরী জীবনের মধ্যে নানা সময়ে তিনি অনেকগুলি নানা শাস্ত্রের পুস্তক ও পুস্তিকা ফার্সী ও উর্দ্দু ভাষায় প্রণয়ন করিয়াছিলেন বড়ই পরিতাপের বিষয় সেগুলির পান্ডুলিপি আজ পাওয়া যায় না। তিনি পুতহস্তে কোরআন শরীফও নকল করিয়া ছিলেন কিন্তু তাহাও কালের স্রতে উধাও হইয়াগিয়াছে। “দিওয়ানে ওয়াইসী” নামে অতি বিখ্যাত ফার্সী ভাষায় অমিয়-মধুর, আধ্যাত্মিক ফায়েজ পূর্ণ একটি বৃহৎ কাব্যগ্রন্থ রচনা করিয়া গিয়াছেন। উক্ত কাব্যগ্রন্থটি কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু পুস্তকটির পবিত্র পান্ডলিপি চিরতরে নিখোঁজ হইয়া গিয়াছে। তিনি সহি হাদিস শরীফের একটি সুবৃহৎ সংকলন সৃষ্টি করিয়াছিলেন, কিন্তু বড়ই দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, এই অমূল্য পান্ডুলিপিটিও অন্তর্হিত হইয়াছে।

কলিকাতা ধর্ম্মতলার টিপু সুলতানের মসজিদের ওয়াকফ নামা তিনি পূত হস্ত দ্বারা লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন। উক্ত পান্ডুলিপি মসজিদের মতোয়াল্লীর নিকট লক্ষৌতে অদ্যাবিধ বিদ্যমান রহিয়াছে।

Additional information