হযরত ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার ঐশ্বারক কারামত

হযরত ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার ঐশ্বরিক কারামত

 

আমি যা চেয়েছিলাম তা পেয়েছি, আল্লাহ আমার সকল কামনা পূর্ণ করেছেন, যখন কোনো ব্যক্তি সর্বশক্তিমান আল্লাহ’র কৃপায় সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হয় তখন সে এই কথাগুলিই বলে। ইহার সত্যতা প্রমাণ করা সব সময় সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। এটা কোনো ব্যক্তির আত্মিক ও হৃদয়ঘটিত অনুভব। পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরীফে এ বিষয়ে একাধিক প্রমাণ বর্তমান। এ সম্পর্কে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। কুতুবুল এরশাদ রাসূলেনোমা পীর হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) বিশেষ দৃষ্টিশক্তির প্রভাবে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে প্রত্যক্ষ করতে পারতেন কয়েক মুহূর্তের মধ্যে এবং অন্যদের বা অন্যান্য ভক্তদের হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর দর্শন করাতে তিনি সক্ষম। এই রকম শক্তির তিনি অধিকারী ছিলেন।হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) হেরা পর্বতের গুহায় দিনের পর দিন কোন কোন সময় মাসাধিকাল এবাদত করতেন। আল্লাহ রাসূল কি পদ্ধতিতে এবাদত করতেন কেউ তা উল্লেখ করেন নি। দীর্ঘ ১৫ বৎসর বিভিন্ন সময়ের এ নির্জন এবাদত ইসলামের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসূল (সাঃ) এর নির্জন বাস ও ধ্যান ধারণার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন মহিয়সী খাদিজা (রহঃ) ও হযরত আলী ইবনে আবু তালিব। কারণ উনারা দুজনেই হেরা গুহায় রাসূলের খোঁজ খবর নিতেন। আল্লাহ রাসূলের প্রথম জীবনে প্রচন্ড দুর্দ্দিনে উনারা তাঁহার পাশে ছিলেন। মা ফাতেমা খাতুনে জান্নাত তাঁরই গর্ভজাত উপহার এদের কাছ থেকে কোন হাদিস রেকর্ড করা হয়নি। অথচ যারা রাসূল (সাঃ) এর ঘাড়ে উটের ভুঁড়ি চেপে দিয়েছিলেন যারা তাঁর বুকে বর্শা নিক্ষেপ করেছিলেন যারা তাঁর দাঁত ভেঙ্গে দিয়েছিলেন, তাঁহার রোগ শয্যায় কটুক্তি করেছিল তাদের কাছ থেকে হাজার হাজার হাদিস বড় বড় কেতাবে স্থান পেয়েছে। এটা ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) বহু হাদিসের তথ্য রাসূল (সাঃ) থেকে জেনেছিলেন যা হাদিসে রেকর্ড করা হয় নি বা ইচ্ছাকৃত বাদ দেওয়া হয়েছে। এখানে হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার কিছু কতিপয় অলৌকিক শক্তির ঘটনা সম্বন্ধে আলোচনা করছি। তাঁর অন্যতম প্রধান শিষ্য হযরত মাওলানা সামসুল ওলামা গোলাম সালমানি একটি ঘটনার উল্লেখ করেন। একদিন কলকাতা মাদ্রাাসার মোদার্রেস হযরত মাওলানা সাহাদাৎ হোসেন বিহারী হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার দরবার শরীফে উপস্থিত হন, হাদিস শরীফ নিয়ে তখন হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) আলোচনা করছিলেন। এই সময়ে হযরত মাওলানা সাহাদাৎ হোসেন তাঁহাকে বলেন আপনি ইতিপূর্বে পয়গম্বর হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে যে সকল তথ্য পরিবেশন করেছেন তার সঙ্গে হাদিস শরীফের কোনো যোগ নেই। হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) প্রত্যুত্তরে বলেন, তার কথা যথার্থ হাদিস শরীফে না থাকলেও ইহা রাসূলের কথা। কিন্তু তিনি পুনরায় বলেন যেহেতু তিনি (হযরত মাওলানা সাহাদাৎ হোসেন) স্বয়ং হাদিস শরীফের মোদ্দার্রেস তিনি হাদিসের কোথাও এর সত্যতা খুঁজে পান নি, এজন্য তিনি পুনরায় একথা অস্বীকার করেন।

হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বা তাঁহার এক দৃষ্টিতে তাকালেন। তিনি তখন সঙ্গহীন হয়ে পড়েন। হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) তখন তাঁহার এক শিষ্যকে সাহাদাৎ হোসেনের মাথায় জল দিতে বললেন। মাওলানা গোলাম সালমানি তাঁর মাথায় জল দিলেন। কয়েক মিনিট পর তিনি স্বীকার করলেন হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বা (রহঃ) যেসকল কথা বলেছেন তা সম্পূর্ণ সত্য। ঠিক তখনই হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) এর কোনো শিষ্য মাওলানা গোলাম সালমানি প্রশ্ন করলেন আপনি প্রথমে অস্বীকার করলেন, পরে তা স্বীকার করছেন এর কারণ কি? উত্তরে সাহাদাৎ হোসেন জানালেন তিনি যে সময় অচেতন ছিলেন, তখন পয়গম্বর হযররত মোহাম্মদ (সাঃ) তাঁকে দর্শন দিয়ে বলেন, হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) তাঁহার বিষয়ে যে সকল কথা বলেছেন সে সবই সত্য। আমি স্বয়ং এ ঘটনার সাক্ষী। হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) সঙ্গে কখনও বির্তকে যেও না।


একদিন হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বা পালকি চেপে তাঁহার মুরিদের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে এক পালকি বাহককে সর্প দংশন করে। সে কথা জানতে পেরে হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) তাঁহার অলৌকিকতা  দ্বারা পালকি বাহককে সুস্থ করলেন।

বর্তমান বিাংলাদশের খুলনা জেলার অর্ন্তগত জুগিহাট গ্রামে সোলপুরের মৌলভী শ্যাম সাহেব বলেন, একদিন এক মসজিদে সন্ধ্যার মাগরিবের নামাজের সময় আমরা হযরত বাবার ফতেহ আলী ওয়াইসী কাছে তাওয়াজুহ নিচ্ছিলেন। সে সময় সেখানে কোনো আলো ছিল না। সেই অন্ধকার এক ব্যক্তি অপর এক অচেনা ব্যক্তির দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হন। তাকে ইচ্ছা পূর্বক আঘাত করা হয়েছে এই চিন্তা করে তিনি হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বাকে অভিযোগ করেন। কিন্তু সেই ব্যক্তি অভিযোগ অস্বীকার করলেন। হযরত বাবা ওয়াইসী তাঁকে বললেন, এক জ্বীন তাঁর নিকট তাওয়াজুহ নিচ্ছিল। আমার মনে হয় তোমার একটি পা তার শরীরের উপর লাগে তাই জ্বীন মুরিদ তোমাকে চপেটাঘাত করেছে।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ফতেহ আলী ওয়াইসী বাবার আরও বহু জ্বীন শিষ্য ছিল। হযরত সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার মাতামহ পায়ের যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিলেন। নানা রকম চিকিৎসা করেও বিশেষ আরোগ্য লাভ করেন নি। একদিন হযরত বাবা ওয়াইসী (রহঃ) তাঁহার পদস্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে সকল যন্ত্রণার অবসান হয়। তাঁহার মাতামহ বললেন যন্ত্রণার অনুভূতি আর নেই।

মুর্শিদাবাদের হযরত মাওলানা আব্দুল হাই বলেন, একবার হযরত সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) আধ্যাত্মিক শিক্ষা প্রদানের জন্য সুন্দরগঞ্জ যান। তাঁর আগমন বার্তা মুহূর্তে মধ্যে চর্তুদিতে ছড়িয়ে পড়ে। হযরত খোরাসানি পীর সাহেব সেই সংবাদ পান। তিনি কামচিবাড়ি থেকে তাঁর পিতা শিষ্যদের নিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। হযরত ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বা তাঁহার থলি থেকে কিছু চাল হযরত খোরাসানিকে দিলেন আহারের জন্য। সেই চাল আহার গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে হযরত খোরাসানির দেহে এক বিদ্যুতের চমক খেলে গেল। তাঁর হৃদয় প্রশান্তিতে পূর্ণ হয়ে গেল। নিজের ইচ্ছানুসারে হযরত খোরাসানি পীর আধ্যাত্মিক শিক্ষার জন্য হযরত ওয়াইসী ক্বিবলার সঙ্গে নিলেন। তিনি তাঁর শিষ্যদের নিয়ে হযরত ওয়াইসীসহ নদীতে নৌকাবিহারে যান। নৌকা গভীর জলে গেলে হযরত বাবা ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) ফেরার অভিপ্রায় জানান।

হযরত খোরাসানি তাঁহার সম্মতি যখনই দিলেন। হযরত ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বা তৎক্ষণাৎ নদীতে ঝাঁপ দিলেন, কিন্তু নদীতে স্থির দাঁড়িয়ে রহিলেন। তারপর পুনরায় হযরত খোরাসানিতে বললেন, এখন আমি যেতে পারি? তিনি অনুমতি দিলেন। এইভাবে ক্রমে হযরত ওয়াইসী ক্বিবলার কষ্ঠ পর্যন্ত নদীর জলে ডুবে গিয়ে পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি আরও যাব? হযরত খোরাসানি সম্মতি জানালেন। হযরত ওয়াইসী ক্বিবলা তৎক্ষণাৎ জল থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। এই দৃশ্য দেখে সকলে হতবাক হয়ে গেলেন। তিনিও নদীতে ঝাঁপ দিতে উদ্যত হলেন। নৌকার অন্যান্য যাত্রীরা ঐ ফকিরের ন্যায় মৃত্যু বরণ না করার জন্য তাঁকে অনুরোধ করল। শেষ পর্যন্ত অবস্থা কি হয় দেখার জন্য বলল। নদীকূলে পৌঁছে তিনি হযরত ওয়াইসী ক্বিবলার খোঁজে পাগলের ন্যায় ঘুরতে লাগলেন।

তিনি অদূরে নদীর পাশে ফুলের মালা পরিহিত এক উন্মাদ ফকিরকে বসে থাকতে দেখলেন। হযরত খোরাসানি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন এই পথে সে কোনো ফকিরকে দেখেছেন কি না? সে প্রশ্ন করল, আপনি কি রূপ ফকিরের কথা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন? তিনি পূর্বের সকল বৃত্তান্ত তাঁহাকে জানালেন। সকল বৃত্তান্ত শোনার পর সে মন্তব্য করল আপনি ফকিরের সঙ্গে একই ভাবে নদীতে ভেসে গেলে ভালো হত। তাহলে আপনি সর্বশক্তিমান আল্লাহ’র সান্নিধ্য লাভ করতে পারতেন। তিনি ব্যথিত মনে সেই ফকিরের দিকে তাকালেন, একটু এগিয়ে পেছনে তাকালেন ফকিরকে আর দেখতে পেলেন না। তিনি ভুটান পর্বতে হযরত ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন। হযরত খোরাসানি এইভাবে হযরত ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বা দ্বারা পূর্ণ আধ্যাত্ম সাধন-শিক্ষালাভ করেন। আমি এখানে একথা নিবেদন করতে চাই, এই ঘটনাই প্রমাণ করে যে তিনি একজন কত বড় মহান সাধক পুরুষ ছিলেন। হযরত খেজের (আঃ) কাছ থেকে তিনি জলের মধ্যে বিচরণের বিদ্যাশিক্ষা অর্জন করেছিলেন।

হযরত সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার আধ্যাত্ম শিক্ষাদান কালে তাঁর প্রথম খলিফা হযরত আব্দুল হক সিদ্দিকী সিজগ্রামী তাঁর পিতা হযরত মাওলানা সূফী মোহাম্মদ সাবেতকে মনের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন।

তিনি পিতাকে এক পত্রে লেখেন আজ ১৮ই রমজানুল মোবারক দরবার শরীফে এ মহা অলৌকিক ঘটনা ঘটে। অবশ্য তিনি এ ঘটনা প্রকাশ্যের যোগ্য নন, সে কথাও জানান। সেই অলৌকিক ঘটনা হল, সেদিন দেখলাম আমার আত্মা উর্ধলোকে বিচরণ করছে যেন এক আলোকময় মসজিদ। মসজিদের শীর্ষে এক গম্বুজ আর সোপান নির্মিত হয়েছে। পয়গম্বর হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) সেই মসজিদের সোপানে দন্ডায়মান। তাঁহার চতুপার্শ্বে অন্যান্য পয়গম্বর পরিবেষ্টিত। ত্বরিকার ইমাম হযরত বাহাউদ্দিন নক্সবন্দি, এমামে রব্বানি হযরত মোজাদ্দেদ আলফেশানী রাসুলের পীরের সম্মুখে বসিয়া আছেন এবং তাঁদের পিছনে হযরত সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) উপবিষ্ট। এই অবস্থায় আমরা সকলে ধীরে ধীরে ২৪তম দায়রা অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত পৌঁছালাম। তারপর হাকিকতে মোহাম্মদী পর্যায়ে উপনীত হয়ে দেখলাম সেখানে কেবলমাত্র পয়গম্বর মোহাম্মদ (সাঃ) উপস্থিতি ব্যতীত আর কিছু নেই-আহেদাহু লা মারিকালাহুর মাকাম্ সর্বশক্তিমান আল্লাহ’র সঙ্গে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর যোগসূত্র এক স্বর্গীয় আলো ছায়ার স্বরূপ ছিল। আমার অন্যান্য মাশারেখরা সে সময় একই অবস্থার সম্মুখীন হন। অবশেষে আমিও এই অত্যশ্বর্য ঘটনার শেষ পর্যায় উপনীত হলাম।

আমি অনুভব করলাম যে আমি শূন্য হৃদয়ে মহান ওয়াইসী’র দরবার থেকে প্রত্যাবর্তন করছি। তারপর আমি সেখান থেকে কতিপয় ফয়েজ প্রদান করতে বলায় তাঁরা আমার আবেদন পূর্ণ করলেন। তিনি সকল কিছু অনুভব করলেন।

আমি আমার মশায়েখদের সম্মুখে নিজের আকৃতি ব্যক্ত করে পয়গম্বর মোহাম্মদ (সাঃ) নিকট আবেদন করলাম। তারপর আমি দেখলাম রাসূল মোহাম্মদ (সাঃ) একটি পাত্রে কিছু মিষ্ট খাওয়ালেন এবং প্রশ্ন করলেন আরও পানি আবশ্যক কিনা। পয়গম্বরকে প্রত্যুত্তরে আমি জানালাম আমার আরও পানি প্রয়োজন আছে। তখন তিনি সোরাহিটি অর্থাৎ মিষ্ট পানির পাত্রটি তিন মহান মশায়েকদের প্রদান করে আদেশ দিলেন আমাকে পানি পান করাতে। হযরত আব্দুল হক সিদ্দিকী প্রাণ ভরে পান করলেন। আমি উল্লেখ করতে চাই এই নিসবত এ ওয়াইসীয়া ত্বরিকার বিশেষ ফায়েজ হযরত সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসীকে সকল নবীকূল ও সকল ত্বরিকার ইমামদের সাক্ষ্য রেখে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) সরাসরি বিশেষ ফায়েজ প্রদান করেন এবং হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর অসীম কৃপায় এই বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হন। হযরত আব্দুল হক সিদ্দিকী সিরগ্রামী বর্ণনা করেছেন এই স্থানকে দরবারে ওয়াইসীয়া জল। অর্থাৎ এই তারকাকে সকলে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

জীবনাবসানের পর কিছু ও অলৌকিক ঘটনাঃ-

১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে হযরত ওয়াইসী (রহঃ) এর ১০১তম তিরোধান বর্ষ ২০শে অগ্রহায়ণ মোতাবেক ৭ই ডিসেম্বর তাঁহার উরস উৎসব সমাপ্ত হয়। সভার পরে মাইকে প্রচার করা হয় যে সকল ওয়াইসী ভক্ত মসজিদে (২৪/১, মুন্সিপাড়া লেন, কলকাতা-৬, ওয়াইসী দরবার শরীফ) রাত্রি অতিবাহিত করবেন তাঁদের জন্য উপযুক্ত খাদ্য মজুত আছে। রাত্রি প্রায় সাড়ে নয়টার সময় আমাদের সমিতির জনৈক স্বেচ্ছা সেবক সাধারণ সম্পাদক শেখ আহমাদ আলীকে জানালেন ভক্তদের জন্য আর কোন খাবার অবশিষ্ট নেই। শেখ আহমাদ আলীকে তৎক্ষণাৎ কয়েকজন স্বেচ্ছা সেবককে নিকটবর্তী বাজার থেকে চাল, আলু, ডিম প্রভৃতি ক্রয় করে আনতে বলেন, কিন্তু তারা বাজার থেকে প্রত্যাবর্তন করে জানাল সকল দোকানই বন্ধ। শেখ আহমাদ আলী এই সংবাদে হতবাক হয়ে গেলেন কিছুক্ষণের জন্য। রাত্রি প্রায় ১০টা ১০ মিনিটের সময় আজাদ ডেকরেটর্সের লোক দরবার শরীফে আসেন তাঁর ডেকচিগুলি ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য। তিনি দেখলেন একটি ডেকচি গরম শিন্নীপূর্ণ মেহদী গাছের তলার খালি ডেকচির সঙ্গে রাখা আছে। যখনই তিনি একথা শেখ আহমাদ আলীকে জানালেন তৎক্ষণাৎ সেই গরম শিন্নি মসজিদে উপস্থিত প্রায় ১৫০ জনকে বিতরণ করা হল এবং তার পরদিন ও দেওয়া হল।

১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই ডিসেম্বর (২০শে অগ্রহায়ণ) মানিকতলা লাল বাগানস্থ মুন্সিপাড়া লেন, কলকাতা-৬, ওয়াইসী দরবার শরীফে হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার ৯৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপিত হয়। কতিপয় ব্যক্তিকর্তৃক ঐ উরস উৎসবের ওপর ইনজাংশন বলবৎ করেন। কিন্তু হযরত ওয়াইসী অলৌকিক ক্ষমতায় মাননীয় কলকাতা হাইকোর্টের আদেশানুসারে (ইনজাংশন) অনুলিপি ব্যতীত প্রয়োজনীয় অনুমতি ২৪ ঘন্টার মধ্যেই পাওয়া যায়। আইনের ধারায় ইহা অসম্ভব কিন্তু ভক্তের ভক্তির মনের জোরে ইহা সম্ভব হয়েছিল।


অন্যান্য কিছু ঘটনা

হিযরত শাহ্ সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) ব্রিটিশ শাসনের বিরোধী ছিলেন ইহা প্রমাণিত। তিনি ব্রিটিশ শাসকদের ভয়ে কখনও ভীত ছিলেন না যদিও তাঁহারা টিপু সুলতানের পরিবারকে কারারুদ্ধ করেন এবং তাঁহার পরিবারের প্রতি তী দৃষ্টি রাখেন। হযরত ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বা যেভাবে কখনও ভীত না হয়ে নবাব ওয়াজেদ আলী শাহ্ পরিবারকে ঝুঁকি নিয়েও সাহায্য করেছিলেন সেইরূপ টিপুর পরিবারকেও সাহায্য করেন। এভাবেই ভারতে স্বদেশী আন্দোলন তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের উৎসাহ ও উদ্দীপনার বীজ বপন হয়। সে সময় হযরত ওয়াইসী ক্বিবলা পদাঙ্ক অনুসরণ করে বহু মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হন। বহু প্রামান্য দলিল আছে।

সে সময় মহীশূরের প্রিন্স গোলাম মোহম্মদের পরিবারের অর্থানুকালে পবিত্র কোরআন ও আরও নানা ধর্মগ্রন্থ কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। এগুলি ইমামবাড়া লাইব্রেরিতে প্রদান করা হয়। হযরত সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী দ্বারা ইহা প্রকাশ হয়। ইহার দ্বারা প্রমান হয় টিপু পরিবারের সঙ্গে তাঁহার সৌহার্দ্য বা অভিভাবকত্বের সম্পর্ক ছিল।

সে যুগে বিভিন্ন সুলতান যেমন গোলকুন্ডার নবাবের সঙ্গে হযরত ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার সুসম্পর্ক ছিল। প্রিন্স সুলতান রহিমুদ্দিন আহমাদ, নবাব আব্দুল লতিফ সহ সে যুগের জাতিধর্ম নির্বিশেষে বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি নবাব আব্দুস সাত্তার অনেকেই সর্বদা তাঁর মূল্যবান উপদেশ ও নির্দেশ মান্য করার জন্য উন্মুখ ছিলেন।

ভারতের বহু সামাজিক উন্নয়নমূলক সংগঠনের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। তিনি একজন সাধক হলেও আল্লাহ’র সাধনার জন্য নিজেকে কোনো কক্ষে আবদ্ধ রাখেন নি। মানসেবাই হল প্রার্থনা, তিনি তাঁহার কর্মের দ্বারা ইহা প্রমাণ করেন।

কলকাতা ধর্মতলা টিপু সুলতান মসজিদ ও প্রিন্স আনওয়ার শাহ রোডস্থ টিপু সুলতান মসজিদের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন হযরত ওয়াইসী (রহঃ) এই মহৎ অনুষ্ঠানে বহু শ্রদ্ধেয় ও সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব অংশগ্রহণ করেন। টিপু মসজিদের ওয়াকফ নামা তিনিই লেখেন সে সময় তিনি ছিলেন অগাধ পান্ডিত্যের অধিকারী। তা আজও ওয়াকফ অফিসে আছে।

স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে তাঁর ছিল ঘনিষ্ঠ সংযোগ। বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রায়শ উপদেশ, নির্দেশ ও আশীর্বাদের জন্য তাঁর নিকট আসতেন।

আলহাজ ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সাহেব তদীয় ‘ইসলাম প্রসঙ্গ’ গ্রন্থের ১৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করিয়াছেনঃ “একবার সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) ছদ্মবেশে দেশেভ্রমণ করিতে করিতে উত্তরবঙ্গের কমচিবাড়ীর নিকটবর্ত্তী সুন্দরগঞ্জ হাটে অবস্থিত হন। সেখানে তিনি শাহ্ কসীমুদ্দীনের পীর খোরাসান হইতে আগত হযরত মাওলানা শাহ্ সাইয়েদ মোহাম্মদ কাসিম (রহঃ) সাহেবের জনৈক মুরিদের বাড়ীতে কিছু কাল বাস করেন। তাঁহার আধ্যাত্মিক গুণাবলীর কথা ফুলের সৌরভের ন্যায় চারিদিকে ছড়াইয়া পড়ে। তখন খোরাসানী পীর সাহেব কতিপয় মুরিদানসহ সুন্দরগঞ্জে তাঁহার জিয়ারতের জন্য আসেন। সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) তাঁহাকে দেখিবামাত্র জাম্বিল হইতে কয়েকটি চাউল বাহির করিয়া তাঁহাকে খাইতে দেন। তাহাতে তিনি আত্মহারা হইয়া মনে করেন যে, তাঁহার অধিকতর আধ্যাত্মিক আলোক লাভ হইয়াছে। তাঁহাতে তিনি সূফী সাহেবের খিদমতে রহিয়া যান। একদিন সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) কয়েক জন মুরিদসহ তাঁহাকে লইয়া তিস্তা নদীতে নৌ-ভ্রমণ করিতে যান। তিনি নৌকায় ভ্রমণ কালে খোরাসানি পীর সাহেবকে বলেন, “হযরত আমি যাই” তাঁহাতে খোরাসীন সাহেব বলেন, “হ্যাঁ যাই” তদুত্তরে তিনি বলিলেন, “যান”। এবার হাঁটু পর্যন্ত পানিতে ডুবিল এইরূপে ক্রমে বুক, গলা পর্যন্ত পানিতে ডুবিয়া গেল। শেষে যখন বলিলেন, “আমি যাই” তখন “যান” বলার সঙ্গে সঙ্গেই সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা গভীর পানিতে অদৃশ্য হইয়া গেলেন।

এই অভাবনীয় ব্যাপার দেখিয়া খোরাসানী পীর সাহেবও নদীতে ঝাঁপ দিতে উদ্যত হইলেন। কিন্তু নৌকাস্থিত লোকজন তাঁহাকে নিরস্ত করেন। অতঃপর তিনি তীরে উঠিয়া সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বিবলাকে অন্বেষণে নদীর তীর দিয়া চলিতে থাকেন। কিছু দূর গিয়া তিনি দেখিতে পাইলেন, এক পাগলা ফকির কতকগুলি ফুলে মালা গলার দিয়া নদীর তীরে বসিয়া আছেন। তিনি তাঁহাকে সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কথা জিজ্ঞাসা করিলেন তাঁহাতে পাগলা ফকির বলিলেন, কি ভাল হইত, যদি তুমিও তাঁহার সঙ্গে নদীতে ডুবিতে।’ তখন খোরাসানী পীর ব্যাকুল ভাবে কিছু দূর গিয়া ফিরিয়া দেখেন যে, ঐ পাগলা ফকির আর সেখানে নাই তখন তিনি মনে করিলেন যে, ঐ পাগলা ফকির অবশ্য সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা হইবেন। অতঃপর তিনি সন্ধান করিতে করিতে ভুটানের এক পাহাড়ে তাঁহার সাক্ষাৎ লাভ করেন। সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা তাঁহাকে সুলক শিক্ষা দিয়া রংপুর গাইবান্ধা প্রভৃতি অঞ্চলে লোকদিগকে হিদায়ত করিতে উপদেশ দেন।”


কারামতঃ
আল্লাহ্ তালার অসীম করুণায় হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) কাশফ ও কারামত সম্পন্ন আউলিয়া ছিলেন। তিনি পৃথিবীর পরিবর্তে পরকালকে গ্রহণ করেছিলেন। সংসার-আশক্তি ত্যজিয়া খোদাতালার প্রেমাশক্ত ছিলেন। ইহার ফলস্বরূ তিনি আপন শ্রষ্টা পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি লাভ করেছিলেন। তাঁহার দ্বারা অসংখ্য কারামত প্রকাশিত হইয়াছিল। মহাকালের বিস্মৃতির কবল হতে তাঁহার কতকগুলি কারামত সংগ্রহ করে প্রকাশ করা হল।

তিনি সম্পূর্ণ হযরত রাসূল করিম (সাঃ) এর সুন্নতের শরণার্থী হইয়া জীবনযাপন করিয়া গিয়াছেন। তাঁহার সংস্পর্শে আসিলেই ও তাঁহাকে দর্শন মাত্রই আল্লাহ্ তালাকে স্মরণ হইত। তিনি পলক মধ্যেই মুরিদগণের সঙ্গে হযরত নবী পাকের (দঃ) জিয়ারত ঘটাইয়া দিতেন।

হযরত ওয়াইসী ক্বিবলার কন্যা মা জহুরার পুত্র সাইয়েদ এই মনে মাসুম বর্ণনা করেছেন ৪নং যে ৭নং কারামতঃ (৪) একদা কড়েয়া রোডে আহম্মদ কসাই এর মসজিদে তাঁহার তাওয়াজ্জুহ প্রভাবে তিনজন সালেক আল্লাহ্ - প্রেমে দগ্ধ হইয়া মৃত্যুবরণ করিয়াছিলেন।

তিনি তাঁহার কন্যা হযরত সাইয়েদা জোহরা খাতুনকে (রহঃ) একটি থলি দিয়াছিলেন। তাহা হইতে, ফজর নামাজ বাদে বিসমিল্লা বলিয়া হাত দিলে দুইটি রৌপ্য মুদ্রা পাওয়া যাইত।

একদা তিনি কয়েকজন মুরিদসহ বৈকালে আসরের নামাজ সমাধা করিতে কলিকাতা ধর্মতলার টিপুসুলতান মসজিদে যাইতেছিলেন। মসজিদের তোরণ-দ্বারের বাম পার্শ্বের ফুটপাতে জনৈক চর্মকারকে তাঁহার নাম ধরিয়া সালাম প্রদান করেন। ইহাতে চর্মকার সালামের উত্তর দিয়াই অন্তর্নিহিত হইয়া যান। মুরিদগণ ইহার মর্ম জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেন যে, উক্ত চর্মকার আসামের একজন কুতুব। তিনি প্রচ্ছন্ন হইয়াছিলেন। খোদার ইচ্ছায় আজ প্রকাশিত হওয়ার দরুন এই স্থান হইতে প্রস্থান করিয়াছেন।

পুনাশীতে তাঁহার শাশুড়ী সাহেবার পায়ে প্রবল ব্যাথা-বেদনা হইয়াছিল। বহু চিকিৎসাতেও অসুখের উপশম হয় নাই। তিনি বেদনাস্থল স্পর্শ করিয়া ইনশা আল্লাহ্ বেদনা নাই বলার সঙ্গে সঙ্গে বেদনা চিরদিনের জন্য বিদুরিত হইয়াছিল।

একদা কলিকাতা তালতলার ওলি উল্লাহ্ লেনের বিবি সালেতের (বিবি সাওলাতুন নেশা) মসজিদ সংলগ্ন কুঠি, যেখানে তিনি স্বপরিবারে বাস করিতেন, তাঁহার পার্শ্ববর্ত্তী গৃহে নিশাকালে জনৈক খ্রীষ্টান বালিকার ভীষণ পেট ব্যাথ্যা করিতেছিল। তাঁহার কন্যা হযরত সাইয়েদা জোহরা খাতুন (রহঃ) এ বিষয় তাঁহার শ্রুতিগোচর করিয়া দোয়া করিতেন অনুরোধ করেন। তাঁহার “আল্লাহ্ চাহেন বেদনা নাই,” উক্তির সাথে সাথে বালিকাটি আরোগ্য লাভ করিয়াছিল।

তাঁহার কন্যা হযরত সাইয়েদা জোহরা খাতুন (রহঃ) পুনাশীর বাড়িতে একসময় গুরুতর পীড়িত ছিলেন। স্থানীয় চিকিৎসগণ কন্যার অন্তিমকাল ঘনাইয়া আসিয়াছে বলিয়া মন্তব্য করিয়াছিল। তাঁহাকে কলিকাতায় এই সংবাদ জানান হইয়াছিল। তিনি পথ মধ্যে কন্যার অসুখ সবল (দূরিভূত করা) করিয়া দিয়াছিলেন। তিনি পুনাশীর কুটার প্রাঙ্গণে আসা মাত্রই উথান শক্তি রহিত কন্যা বাটীস্থ সকলের সঙ্গে দ্রুতপদে আসিয়া তাঁহার কদমবুসি করিয়াছিলেন।

পুনাশীতে এক সময় তাঁহার মামাত শ্যালিকা খোন্দ কারিনী জারিয়া খাতুন ভীষণ পেটের অসুখে আক্রান্ত হইয়াছিলেন। তিনি দোয়া করায় মুহূর্তে মধ্যেই তাঁহার শ্যালিকা দুঃসহ পুরাতন পেটের পীড়া হইতে অব্যহতি পাইয়াছিলেন।

পুনাশীর বাসগৃহ প্রস্তুত শেষে যখন তাহা প্রাচীর বেষ্টিত হইতে ছিল সেই সময় উত্তর দিকের প্রাচীরের কিয়দংশ সরাইয়া দিবার জন্য রাজমিস্ত্রিদিগকে আদেশ দিয়া সীমানা নির্দেশিত করিয়া দিয়াছিলেন। উক্তস্থানে একজন ওলিআল্লাহ্ মাজার থাকায় তিনি উক্ত কার্য্য করিয়াছিলেন। ইতিপূর্বে মাজারের অস্তিত্বের বিষয় কাহারও জানা ছিল না।


কারামত দুইটি তাঁহার মুরিদের বংশধর পুনাশী গ্রামের খন্দকার নজিরুল সাহেব ব্যক্ত করিয়াছেনঃ-
পুনাশীতে জনৈক কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্থ ব্যক্তি কিছুদিন তাঁহার খেদমতে উপস্থিত ছিলেন। একদা তিনি তাঁহার পিক মাখিবার জন্য পিকদানটি ব্যাধিগ্রস্থ লোকটির হস্তে প্রদান করেন। লোকটি পিকদান হস্তে খানকা হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া যান ও পিক মাখিতে ইতস্ততঃ করিয়া সমুদয় পিক তাঁহার পুনাশীর গৃহ সংলগ্ন মসজিদ-পুকুরে নিক্ষেপ করেন। পিক নিক্ষেপ করিবার সঙ্গে সঙ্গে তাহা একটি সুন্দর প্রস্ফুটিতে শ্বেত-পদ্ম হইয়া ভাসিতে ভাসিতে পুষ্কারিণীর মধ্যস্থলে যাইয়া হঠাৎ ডুবিয়া যায়। ইহা দেখিয়া লোকটি তাঁহার কাছে অভিভূত চিত্তে ফিরিয়া আসেন। তিনি ইতি পূর্ব্বেই আল্লার ইঙ্গিতে ঘটনা অবগত হইয়াছিলেন। তাই লোকটিকে দুর্ভাগ্য বলিয়া বিদায় করিয়া দেন।

পুনাশীর খানকা শরীফে একদা তাঁহার একজন মুরিদ আসিয়া বিনীত চিত্তে নিবেদন করেন যে, তাঁহার ‘কল্ব’ জারী হইতেছে না। ইহাতে তিনি তাঁহার নিজ জায়নামাজের উপর তাওয়াজ্জুহ্ নিক্ষেপ করেন। তাওয়াজ্জুহ্ প্রভাবে জায়নামাজটি আল্লার নামে প্রকাশিত হইতে থাকে। এই দৃষ্টান্ত দেখাইয়া তিনি মুরিদকে বলেন যে হালাল রোজগার দ্বারা আহার না করায় তাঁহার হৃদয় পাষাণ, বধির ও বিমুখ হওয়ার জন্য ‘কলব’ জারী হইতেছে না।

নি¤œ কারামতটি পুনাশীর খন্দকার মকসুদুল হক সাহেব বলিয়াছেনঃ-

হযরত কালু শাহ্ নামায় চট্টগ্রাম দেশীয় তাঁহার একজন মুরিদ বারো বৎসর ধরিয়া তাঁহার সাহচর্য্যে উপস্থিত ছিলেন। কালু শাহ্ তাঁহার অসীম আশেক ছিলেন, এইজন্য তিনি তাঁহার পরিবারবর্গের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করিয়া দিয়াছিলেন। একদিন সহসা তিনি কালু শাহ্কে জিজ্ঞাসা করেন তিনি বিবাহিত কিনা। উত্তরে মুরিদ নিজেকে বিবাহিত বলিয়া পরিচয় দিলে তিনি বলেন একথা ঠিকই, তবে তাঁহার দীর্ঘকাল অনুপস্থিতির জন্য আজ তাঁহার স্ত্রীর বিবাহ হইয়া যাইতেছে। বর ও বরযাত্রী তথায় উপস্থিত, কাজী ও তথায় উপস্থিত; এখনই বিবাহ সমাধা হইয়া যাইবে। এই সংবাদ শ্রবণ করিয়া মুরিদ অস্থির হইয়া অশ্রু বিসর্জন করিতে থাকেন। তখন তিনি মুরিদকে নিজ চাদরের মধ্যে ঢাকিয়া লইয়া তিনবার ‘যাও’ বলিয়া তাঁহার পৃষ্ঠে তিনটি মৃদু আঘাত করন। সঙ্গে সঙ্গেই মুরিদ চট্টগ্রামের নিজ গৃহে বিবাহ মজলিসে উপস্থিত হন। সকলে হঠাৎ কালু শাহ্কে পাইয়া স্তম্ভিত যায়। অতঃপর সমুদয় বৃত্তান্ত শ্রবণ করিয়া সকলে মহা সন্তুষ্ট হন। তৎক্ষণাৎ বিবাহ ভাঙ্গিয়া যায়। স্বামী-স্ত্রীতে পুনমিলন ঘটায় মুরিদ তাঁহার প্রতি অতি কৃতজ্ঞ হন ও খোদাতালার দরবারে অশেষ শোকের নিবেদন করেন। হযরত কালু শাহ্রে (রহঃ) এর মাজার চট্টগামে অবস্থিত।

এই কারামতটি পুনাশীর খোন্দকার একরামুল হক সাহেব বর্ণনা করিয়াছেনঃ-

এক সময় তাঁহার বিশিষ্ট মুরিদ ও খলিফা পুনাশীবাসী হযরত খোন্দকার একরামুল হক সাহেব আসামের কামাখ্যা (কাঁওর) শহরে জনৈক যাদুকর বৃদ্ধার কবলে পতিত হইয়াছিলেন। বৃদ্ধা তাঁহার কন্যার সহিত খোন্দকার সাহেবের বিবাহ দিতে চাওয়ায় খোন্দকার সাহেব অনিচ্ছ প্রকাশ করিলে বৃদ্ধা তাঁহার প্রাণনাশের জন্য পর পর প্রবল শক্তিশালী তিনটি ‘বাণ’ (মন্ত্রদ্বারা মারণ কার্য্য) তাঁহার উপর নিক্ষেপ করে। ইত্যবসরে সেই বিপদপাতকালে তিনি তাঁহার মুর্শিদ হযরত শাহ্ সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বাকে (রহঃ) স্মরণ করিলে সকলের অলক্ষ্যে তিনি অনুস্থলে উপস্থিত হইয়া সমস্ত ‘বাণ’ কাটিয়া দেন এবং মুরিদ ও বৃদ্ধার সম্মুখে আবির্ভূত হইয়া বৃদ্ধার যাদুবিদ্যা বিকল পূর্বক তাহাকে নিস্তেজ করিয়া অন্তর্নিহিত হইয়া যান। অতঃপর বৃদ্ধা মহউৎসাহে খোন্দকার সাহেবকে বলে যে, খোন্দকার সাহেবের জীবন ধন্য, কারণ তিনি মহাশক্তিশালী ধর্মগুরু পাইয়াছেন।

নিম্ন কারামটি হওড়া শহরের ডাক্তার জাদুমিয়া বলিয়য়াছেনঃ-

একদা পুনাশী গ্রামের মসজিদে তাঁহার মুরিদগণ সহ তিনি অবস্থান করিতেছিলেন। সহসা তিনি আখিঁ বন্ধ করিয়া ধ্যানস্থ হইয়া যান। কিয়ৎক্ষণ পর তিনি ঘর্মাক্ত কলেবরে মোরাকাবা হইতে উথিত হন। সকলে ইহার তাৎপর্য্য বিনীত ভাবে জানিতে চাহিলে তিনি বলেন যে, একটি হজ্ব যাত্রা পূর্ণ জাহাজ নিমগ্ন হইয়া যাইতেছিল, আল্লার কৃপায় তিনি তাহা উদ্ধার করিয়া দিলেন।

জ্বীনগ্রস্থ রোগী তাঁহার নিকট আনিতে হইত না কেবল রোগীর আত্মীয়-অভিভাবক আসিয়া রোগীর বিবরণ জানাইলে তিনি তাহাদিগকে বলিতেন, জ্বীন রোগীর উপর আবির্ভূত হইলে জ্বীনকে আমার সালাম জানাইও। অভিভাবকগণ জ্বীনকে তাঁহার সালাম জানাইলে জ্বীন মহাভীত হইয়া তৎক্ষণাৎ পলাইয়া যাইত।

একদা তিনি তালতলার বিবিসালেতের (সাওলাতুন নেশা) মসজিদ-লগ্ন তাঁহার বাসগৃহ হইতে যাত্রা করিয়া ২৪ পরগণা জেলার টিটাগড় শহরে নামিয়া পাল্কি যোগে তাঁহার বিশিষ্ট মুরিদ হযরত সাইয়েদ যুলফিকর আলী সাহেবের আলয় সৈয়দাবাদ গ্রামে যাইতেছিলেন। পথ মধ্যে পাল্কির একজন বাহককে বিষধর সর্পে দংশন করে। বিষের জ্বালায় সে অস্থির হইয়া এই বিষয় তাঁহার গোচরিভূত করিলে তিনি কুওতের ফায়েজ দ্বারা তাঁহার দেহ হইতে বিষ আকর্ষণ করিয়া মৃত্তিকাতে প্রোথিত করার সঙ্গে সঙ্গে সে সুস্থ হইয়া যায়।

এক সময় বিবি সালেতের মসজিদে তাঁহার জনৈক মুরিদ তাঁহার সমীপে হাজির হইয়া ব্যক্ত করেন, তিনি দরুন শরীফ পাঠ করেন কিন্তু হযরত রাসূল পাক (সাঃ) এর ছায়া দেখিতে পান, তাঁহা কায়া দেখিতে পান না। তিনি মুরিদকে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিতে পারেন যে, মুরিদ ‘আল্লাহুম্ম ছাল্লেআলা মুহম্মদিন’ বলিয় দরুদ শরীফ পাঠ করেন। তিনি মুরিদকে ‘আল্লাহুম্ম হুাল্লেআলা সাইয়েদানা মোহাম্মদিন’ বলিয়া তাঁহার আসিলা ধরিয়া চক্ষু বন্ধ করিয়া দরুদ শরীফ পাঠ করিতে আদেশ করেন ও দোয়া করেন। তাঁহার নির্দেশ মত মুরিদ দরুদ শরীফ পাঠ করিয়া হযরত নবী পাকের (সাঃ) জিয়ারত লাভ করিয়াছিল।

কারামত দুইটি বহরমপুর শহরের সাইয়েদ হাফিজুল হাসান সাহেব বলিয়াছেনঃ-

তিনি বিবি সালেতের মসজিদ-লাগা কুঠিতে সে সময় বসবাস করিতেন সেই সময় তাঁহার সর্ব্ব গুণাবতী স্ত্রী পুনাশী মৌজায় কিছু জমি খরিদ করিতে ইচ্ছ করিয়াছিলেন। তিনি ধন্যা যোগে অবগম হইয়াছিলেন যে এই সম্পত্তি লইয়া ভবিষ্যতে অশান্তির সৃষ্টি হইবে। তাই উক্ত সম্পত্তি খরিদ করিতে নিষেধ করিয়াছিলেন। স্ত্রী নিষেধ অমান্য করিয়া উক্ত সম্পত্তি খরিদ করিলে কিছুদিন পরে উক্ত সম্পত্তি লইয়া মুর্শিদাবাদ জেলার ফান্দি মহকুমা শহরে মকদ্দমা সৃষ্টি হইয়া এবং ক্রমে ননা রকম গোলযোগ উৎপন্ন হইয়া তাঁহার ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা প্রমাণিত করে। অতঃপর তাঁহার স্ত্রী তাঁহার নির্দ্দেশে বিক্রেতার নিকট হইতে অর্থ ফিরিয়া লইয়া উক্ত সম্পত্তির স্বতœ ত্যাগ করিয়াছিলেন।

তিনি যখন কড়েয়া রোডের আহমদ কশাই এর মসজিদের নিকটবর্তী বেগ সাহেবের বেগ বাগান রো এর কুঠিতে স্বপরিবারে বাস করিতেছিলেন তখন তাঁহার সাধ্বী সহধর্মিনী তাঁহার অগোচরে কতকগুলি স্বর্ণালঙ্কার খরিদ করিয়াছিলেন। কাশফ যোগে তিনি ইহা জানিতে পারিয়া স্ত্রীকে গহণাগুলি বিক্রয় করিয়া দিতে উপদেশ দেন কারণ হযরত রাসূল করিমের (দঃ) দাসানুদাস হইয়া স্বর্ণ ব্যবহার করিতেও আড়ম্বর প্রিয় হইতে তিনি লজ্জা ও ভীতি বোধ করেন। হযরত রাসূল করিম (দঃ) ও তাঁহার পরিবারবর্গ স্বর্ণ ব্যবহার করেন নাই। উপরন্তু তাঁহার দৈন্যের মধ্যেদিন কাটাইয়া গিয়াছেন। তাঁহার উপযুক্তা ভার্য্যা অতঃপর হৃষ্টচিত্তে স্বর্ণালঙ্গারগুলি বিক্রয় করিয়াছিলেন।

বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা জেলার যুগিহাটী গ্রামের মৌলবী সায়েম সাহেব বর্ণনা করিয়া গিয়াছেন নিচের কারামতটিঃ-

একদা বিবি সালেতের মসজিদে তাঁহার কয়েকজন পীর ভাই হযরত ফতেহ্ আলী ওয়াইসী ক্বেবলার সঙ্গে মগরের নামাজ সাঙ্গ করিয়া তাঁহার পশ্চাতে বসিয়া মোরাকাবায় তন্ময় ছিলেন। সে সময় মসজিদ গৃহাভ্যন্তরে প্রদীপ ছিল না। সেই অন্ধকারে তাঁহার জনৈক মুরিদকে কেহ চপেটাঘাত করিল। সকলের মোরাকাবা অন্তে সেই মুরিদটি নিজের পার্শ্ববর্তী পীর ভাইয়ের নামে হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলার কাছে অভিযোগ করিলে পার্শ্ববর্তী মুরিদ অপরাধ অস্বীকার করিলেন। হযরত শাহ্ সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলা তখন সকলের অবগতির জন্য ব্যক্ত করেন যে, তাঁহার একটি জীন মুরিদ ও সে সময় তাঁহার নিকট তাওয়াজ্জুহ লইতেছিলেন। চপেটাঘাত প্রাপ্ত মুরিদটির পা জ্বীনের শরীর স্পর্শ করায় জ্বীনটি তাঁহাকে চপেটাঘাত করিয়াছেন ও তাওয়াজ্জুহ লইয়া সকলের আগে প্রস্থান করিয়াছেন। এই অহেতুক উগ্র স্বভাবের জন্য হযরত ফতেহ্ আলী ওয়াইসী ক্বেবলা জ্বীন মুরিদকে তিরস্কার করিয়াছিলেন।

তাঁহার মুরিদ ফুরফুর শরীফবাসী হযরত কাজী গোলাম সলমানী সাহেব দ্বারা নিচের কারামত বর্ণিত হইয়াছেঃ-

একদা কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসার মোদারেস মাওলানা সাহাদত হোসেন বিহাড়ী সাহেব ও হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলার মধ্যে একটি হাদিস শরীফ লইয়া মতান্তর ঘটে। মাওলানা সাহেব হাদিস শরীফটি অস্বীকার করিতেছিলেন। এইজন্য হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলা তাঁহার উপর জোরে তাওয়াজ্জুহ নিক্ষেপ করেন। ফলে মাওলানা সাহেব অচেতন হইয়া পড়েন। চেতনা লাভের পর তিনি হাদিস শরীফটি স্বীকার করিয়া লন ও বলেন তাঁহার অচেতন অবস্থায় হযরত রাসূল পাক (সাঃ) তাঁহাকে হাদিস শরীফটি মানিয়া লইতে আদেশ করেন। অতঃপর মাওলানা সাহেব সজল নেত্রে হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলার নিকট ক্ষমা চাহিয়া বিদায় গ্রহণ করেন।


নিচের কারামতটি তাঁহার কন্যা হযরত সাইয়েদা জোহরা খাতুন (রহঃ) বর্ণনা করিয়াছিলেনঃ-

এক সময় একব্যক্তি তাঁহার পিতা হযরত ফতেহ্ আলী ওয়াইসী ক্বেবলার সন্নিধানে আসিয়া সবিনয় নিবেদন করেন যে, তাঁহার পাঁচশত টাকার ঋণ পরিশোধের নিমিত্ত তিনি হযরত নবী পাকের (দঃ) নিকট আরজী পেশ করিলে গতরাত্রে হযরত নবী (দঃ) তাঁহাকে হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলার নিকট উপস্থিত হইবার জন্য স্বপ্নে আদেশ করেন। সেই রাত্রে হযরত ওয়াইসী ক্বেবলাও হযরত নবী পাক (দঃ) কর্তৃক একপ্রকার আদেশ পাইয়াছিলেন। তাই লোকটি পাঁচশত টাকার সওয়াল করিলে তিনি সিন্দুক হইতে তৎক্ষণাৎ পাঁচশত টাকা লইয়া আগন্তুককে দান করেন। অতঃপর আগন্তুক প্রস্থান করেন। এই ঘটনা হযরত নবী পাকের (দঃ) প্রতি তাঁহার অসাধারণ প্রেমের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।


নিচের কারামতটি তাঁহার মুরিদ ফুরফুরা শরীফ গ্রামের হযরত আবুবকর সিদ্দিকী বর্ণনা করিয়াছেনঃ-

এক সময় হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলা তাঁহাকে লইয়া জুমার নামাজ পড়িতে গৃহ হইতে বহির্গত হন। পথ মধ্যে তাঁহার মুরিদের মনে এই ভাব উদয় হয় যে, তাঁহার পীর ক্বেবলার ‘ফানাফির-রাসূল’ অবস্থা তিনি দর্শন করিতে চান। তাঁহার মুরিদ ওজু করিয়া মসজিদ-গৃহে প্রবেশ করা মাত্রই ঈমামের পেশ-নামাজ স্থানে হযরত নবী করিম ক্বেবলাকে (দঃ) দর্শন করেন। তিনি তাঁহাকে আবেগভরে দর্শন করিতেছেন হঠাৎ তৎস্থানে তিনি তাঁহার পীর ক্বেবলাকে দেখিতে লাগিলেন। এইভাবে পীর মুরিদকে ‘ফানাফির-রাসূল’ হওয়ার দৃষ্টান্ত দেখাইয়া দিয়াছিলেন।


নিচের কারামত দুটি তাঁহার কন্যা হযরত জোহরা খাতুন (রহঃ) বর্ণনা করিয়াছিলেনঃ-
হযরত ফতেহ্ আলী ক্বেবলা যখন নিজ হুজরা শরীফ হইতে নিস্ত্রান্ত হইতেন তখন কখনও কখনও তন্ময় অবস্থায় হযরত নবী করিম পাকের (দঃ) কখনও, কখনও হযরত গাউসুল আযম পাকের রূপে অবস্থায় থাকিতেন। এতদর্শনে তাঁহার পুণ্যবর্তী ভার্য্যা এ বিষয়ে তাঁহাকে অবগত করিলে তিনি আপন আকৃতিতে সহসা ফিরিয়া যাইতেন।


নিচের কারামত দুইটি তাঁহার মুরিদ পুনাশী গ্রামের হযরত একরামুল হক সাহেব বর্ণনা করিয়াছেনঃ-
একবার পাঞ্জাবের সিরহিন্দ শরীফের বংশধর খোরাসানের গদ্দিনসীন পীর হযরত মৌলভী গুল হোসেন সাহেবের দুইজন মুরিদ কলিকাতা কড়েয়া রোডের আহমদ কসাইয়ের মসজিদে তাঁহার নিকট উপস্থিত হইয়া হযরত নবী করিমের (দঃ) জিয়ারত লাভ করিতে প্রবল বাসনা করিয়া তাঁহার পবিত্র চরণে পতিত হন। তিনি তাঁহাদিগকে নিজ আসিলা ধরাইয়া মোরাকাবায় বসাইয়া দেন। কিয়ৎক্ষণ পরে জিজ্ঞাসা করে জিয়ারত হইয়াছে কিনা। উত্তরে তাঁহারা হয় নাই বলিলে তিনি রোশভরে বলিয়া উঠেন, “কি কঠিন হৃদয়”। ইহা বলার সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার উভয়ে হযরত নবী করিম পাকের (দঃ) দর্শন লাভ করেন। এইরূপ ক্ষমতা ধারণের কারণে তিনি ‘রাসূলে-নোমা’ নামে অভিহিত হইয়াছেন।

এক সময় পাঞ্জাবের সিরহিন্দ শরীফের বংশধর ও খোরাসনের পীর হযরত মৌলভী গুল হোসেন সাহেব উক্ত আহমদ কসাইয়ের মসজিদে হযরত ওয়াইসী ক্বেবলার নিকট আসিয়া বলেন, “আমার দুইজন মুরিদের মুখে শুনিয়াছি আপনি পলকের মধ্যে হযরত নবী করিম (সাঃ) সহিত জিয়ারত ঘটাইয়া থাকেন। এতদ শ্রবণে ব্যাকুল চিত্তে আপনার হাতে বায়াত হইতে আসিয়াছি। হযরত রাসূল পাকের (সাঃ) জিয়ারত করাইয়া আমাকে ধন্য করুন দয়া করিয়া। হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেলার বলেন, “আমি আপনাদের নক্শবন্দী-মুজাদ্দেদী দরবারের একজন নগন্য খাদেম। আপনাকে মুরিদ করা বিয়াদবি বোধ করি”। খোরাসনী সাহেব হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলার নিকট ষষ্ঠাদশ দিবস অতিবাহিত করেন। পর দিবস তিনি তাহার সঙ্গে আহার পর্ব সময়ে বলেন, “হুজুর, আমার আশা কি সফল হইবে না?” ইহাতে হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলা আপন ঝুটা হাত খোরাসানী পীরের পৃষ্ঠে রাখিয়া বলেন, “আপনাকে আমার সিলসিলাভুক্ত করিয়া লইলাম। যখন আমার জিয়ারতের বিশেষ আকাঙ্খা করিবেন তখনই আমার দর্শন লাভ করিবেন।” যখনই আমার জিয়ারতের বিশেষ আকাঙ্খা করিবেন তখনই আমার দর্শন লাভ করিবেন।” তারপর তিনি খোরাসানী পীরকে নিজের আসিলায় মোরাকাবায় বসাইয়া হযরত রাসূল পাকের (সাঃ) জিয়ারত করাইয়া দিয়াছিলেন। পরে এই খোরাসানী পীর তাঁহার বিশিষ্ট মুরিদে গণ্য হইয়াছিলেন।

নিচের কারামতটি তাঁহার কন্যা হযরত জোহরা খাতুন (রহঃ) বর্ণনা করিয়াছেনঃ-
এক সময় তিনি বিবি সালেতের মসজিদে কতিপয় মুরিদ সহ হযরত আবু বকর সিদ্দিকী সাহেবকে তাওয়াজ্জুর দিতে ছিলেন। যখন হযরত সিদ্দিকী সাহেবকে খাসভাবে তাওয়াজ্জুহ প্রদান করিতেছিলেন তখন কে যেন তাহা পশ্চাত হইতে আকর্ষণ করিয়া লইতে ছিল। তিনি তাহা অনুধাবন করিয়া মসজিদের চাতালে যে ব্যক্তি শুইয়াছিলেন মুরিদকে ঈঙ্গিতে তাহাকে দেখাইয়া বলেন যে, উক্ত ব্যক্তির দ্বারা এই কার্য্য সংঘটিত হইতেছে। অতঃপর তাঁহার অপরাধের শাস্তি স্বরূপ তাঁহার সমুদয় নিস্বত ছিনাইয়া লইয়া, হযরত গাউসুল আযম ক্বেবলার নিকট জমা দেন। সেই লোকটি তখন স্বিত-হারা হইয়া পাগলের মত হইয়া যান। তাঁহার অস্থিরতা দেখিয়া তিনদিন পরে তাহাকে বিশেষ সাবধান করিয়া দিয়া তাঁহার নিস্বতগুলি দেন। লোকটি তৎপর তাঁহার চরণ ধরিয়া ক্ষমা চাহিয়া মুহূর্তেই তথা হইতে প্রস্থান করেন। সকলের অবগতির জন্য তিনি বলিয়াছিলেন, উক্ত ব্যক্তি মুর্শিদাবাদ শহরে একজন কুতুব।

নিম্নের কারামত দুইটি ফুরফুরা শরীফের জনাব কাজী নজিবুর রহমান সাহেব বর্ণনা করিয়াছেন। (ইনি তাঁহার মুরিদ হযরত কাজী গোলাম সল্মানী সাহেবের কন্যার বংশধর)-
কোনো এক সময় কলিকাতা ধর্মতলার বিখ্যাত টিপু সুলতান মসজিদে এক শুক্রবার জুমার নামাজের সময় তিনি খুতবা (ইসলামিক ভাষণ) পাঠান্তে তদানিন্তন বৃটিশ সরকারের মুসলিম বিদ্বেষ নীতির বিরুদ্দে বক্তৃতা দান করিলে, সরকার তাঁহাকে বন্দী করিবার জন্য পুলিশ দ্বারা মসজিদ ঘেরাও করে। কিন্তু তিনি ধীরে সুস্থে নামাজ সমাধা করিয়া সকলের অলক্ষ্যে পলক মধ্যে চট্টগ্রাম শহরের শাহী মসজিদে প্রস্থান করেন। পরে তাঁহার বিরুদ্ধে পুলিশ অনুসন্ধান হইলে চট্টগ্রামের জেলা শাসক (ম্যাজিষ্ট্রেট) কলিকাতার পুলিশ দফ্তরে সংবাদ প্রেরণ করেন যে, তিনি উক্ত দিবসে চট্টগ্রাম শহরের শাহী মসজিদে আসরের নামাজ (বৈকালিক উপসনা) সমাধা করিয়াছেন। এই সংবাদ বলে ধর্মতলা মসজিদে জুমার দিন তাঁহার উপস্থিতি অপ্রমাণিত হইয়া সরকারের মকদ্দমা সরাসরি বাতিল হইয়া যায়।


নিম্নের কারামত হযরত সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলার নাতনী মা ফতেমা জোহরা খাতুন অর্থাৎ মা জোহরা খাতুনের বর্ডমা, এহসীন মাসুমের স্ত্রী হইতে প্রাপ্তঃ-
পুনাশী গ্রামে হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলার মামাতো শ্যালিকার জ্যেষ্ঠ পুত্র খোন্দকার বজলে আযিম সাহের একবার পরীক্ষার কৃতকার্যতার জন্য তাঁহার মাজারে দোয়ার ভিখারী হইয়া উপস্থিত হন। কিয়ৎক্ষণপর সমাধি হইতে গম্ভীর স্বরে আওয়াজ উথিত হয়, ঘরে যাও, ইনশা আল্লাহ পাশ করিবে।”

নিম্নের কারামত হযরত সাইয়েদ জোহরা খাতুন (রহঃ) বলিয়াছিলেনঃ-
ওলিউল্লাহ লেনের বিবি সালাতের মসজিদ সংলগ্ন কুঠীতে স্বপরিবারে থাকার কালে একদা এক রজনীতে উক্ত কুঠীর ছাদের উপরে তাঁহার স্ত্রী ও কন্যাকে নিজের পশ্চাতে বসাইয়া তাওয়াজ্জুহ্ দিয়া তাঁহাদের সঙ্গে নিজেও আল্লাহ্-প্রেমে তন্ময় হইয়া যান। এদিকে গভীর রজনীকালে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হইয়া সমগ্র কলিকাতার বহু বৃক্ষাদি উৎপাতিত ও ভগ্ন হইয়াছিল এবং রাস্তা, গলি ও গৃহাঙ্গন জলে ভরিয়া গিয়াছিল। কিন্তু তাঁহাদের কোনই ক্ষতি হয় নাই; এমন কি তাঁহাদের সমগ্র শরীর, জায়নামাজ ইত্যাদি সম্পূর্ণ শুষ্ক অবস্থায় ছিল। পরদিন প্রভাতে সূর্য উদিত হলে তাঁহাদের ধ্যান ভঙ্গ হইয়াছিল।

নিম্নের কারামত মঙ্গলকোর্ট গ্রামের জনাব কাজী ডাঃ আবু তোরাব সাহেব ব্যক্ত করিয়াছেনঃ-
বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোর্ট গ্রামের অধিবাসী তাঁহার কলিকাতার গৃহে আগমন করিয়া সেখানে রাত্রি যাপন করিতেছিলেন ও সেই রাত্রে কাজী সাহেব স্বপ্নদোষে আক্রান্ত হন। তিনি কাশফ যোগে তাহা অবগত হইয়া মুরিদের কক্ষের দ্বার প্রান্তে আসিয়া মুরিদকে ডাকিয়া বলেন, “মৌলভী সাহেব গোসলখানায় যাইয়া গোসল করিয়া নাপাকী (অপবিত্রতা) ধুইয়া ফেলুন ও তহজ্জুদ নামাজ সমাধা করুন।

নিচের কারামত ২৪ পরগণা নাওরা গ্রামে জনাব কাজী গোলাম মুস্তফা বর্ণনা করিয়াছেনঃ-
বাংলার ১৩৭৩ সালে তিনি একটি কোদাল কাজ করিতে গিয়া ভুল ক্রমে হারাইয়া ফেলেন। সে সময় তাঁহার রোজগার অতি অল্প ছিল। কোদালটি তিনি অন্য লোকে নিকট হইতে চাহিয়া আনিয়াছিলেন। তাঁহার এমন সঙ্গতি ছিল না যে আর একটি কোদাল খরিদ করিয়া কোদালের মালিককে ফেরত দেন। ইহাতে তিনি বড়ই চিন্তিত হইয়া জোহরের নামাজ শেষে হযরত সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলার মাজারে গিয়া তাঁহার দয়া প্রার্থী হন। তৎপরদিন ফজরের নামাজ অন্তে তিনি পুনরায় তাঁহার মাজারে দোয়ার জন্য গমন করেন। সেখানে গিয়া তিনি মাজারের প্রবেশ পথের পাশে কোদালটি পড়িয়া থাকিতে দেখেন। ইহাতে তিনি চরম পুলকিত হইয়া কম্পিত হস্তে কোদালটি গ্রহন করেন ও মাজারে অশেষ কৃতজ্ঞতা নিবেদন করেন।


নীচের কারামতটি বর্ধমান জেলার কুলুট গ্রামের অধিবাসী জনাব মোহাম্মদ আজমল হক সাহেব ব্যক্ত করিয়াছেনঃ-
ইংরেজী ১৯৭৩ সালে জানুয়ারী মাসে তাঁহার অফিসার চাকুরীতে তাঁহার পদাবনতি করিয়া দেন ও ৫০ টাকা মাহিনা কম হইয়া যায়। উক্ত বৎসরের এপ্রিল মাসে তিনি লেখককে সঙ্গে লইয়া হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলার মাজারে দোয়া ভিক্ষা করিতে উপস্থিত হন। তিনি তাঁহার জন্য এ বিষয়ে হুুুুজুর ক্বেবলার নিকট খাসভাবে দোয়া চাহিতে লেখককে অনুরোধ করেন। এবং নিজেও বিনীত ভাবে দোয়ার প্রার্থী হন। মে মাসে অর্থাৎ একমাস পরেই তিনি চাকুরীতে পদোন্নতি লাভ করেন। যে পদ হইতে তাঁহাকে অপসারণ করা হইয়াছিল সেই পদ হইতেও উচ্চপদে তিনি প্রতিষ্ঠিত হন। এবং তাঁহার মাহিনা মাসে ১৫০ টাকা করিয়া বাড়িয়া যায়। বর্তমান তিনি এই উচ্চদে অধিষ্ঠিত আছেন।

নিম্নে লিখিত কারামত কয়টি হযরত সাইয়েদ আব্দুল মতিন বাঁহাগীর বর্ণনা করেছেনঃ-
সে সময় তিনি কলিকাতা তালতলার ২৮নং মার্সডেন স্ট্রীটের কুঠীতে স্বপরিবারে বাস করিতেন সেই সময় সেই কুঠীতে একদা জ্বীনের প্রাদুর্ভাব হইয়াছিল এবং লেখকে মধ্যম পুত্র সাইয়েদ হুমায়ুন পরভেজ শাবির জ্বীনের দ্বারা প্রবল ভাবে আক্রান্ত হন। তখন শাবির অতি অল্প বয়স্ক ছিলেন। উপর্য্যােপরি কয়েক দিবস তাঁহার মাজার শরীফের গিয়া পুত্রের আরোগ্য প্রার্থনা করার ফলে তাঁর উক্ত পুত্র জ্বীনের কবল হইতে চিরতরে মুক্তি লাভ করেন। ইহা ইংরাজী ১৯৬৭ খ্রীষ্টাব্দের কথা। হযরত ফতেহ্ আলী ওয়াইসী ক্বেবলা স্বপ্নে এই সময় তাঁকে এরশাদ করেন যে সময় তিনি ও মওলালী পীর সাহেব তাঁহার পরিবারের উপর নিগাহ্বাণী করিতেছেন।

ইংরাজী ১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাসে তিনি পেটের অসুখে প্রবল ভাবে আক্রান্ত হন। কোন কিছুই হজম হইত না। যাহা খাইতেন তাহাই বমি হইয়া। ভীষণ কোষ্ঠবদ্ধতায় ক্লেশ ভোগ করিতেছিলেন। মাসাধিক তাঁহার মোটেই বাহ্য হয় নাই। পায়খানার খুব শক্তিশালী টেবলেট খাইয়াও পায়খানা হয় নাই। এ্্যানিমা (ডুশ) দিয়াও বিন্দুমাত্র পায়খানা হয় নাই। কলিকাতা ও বারুইপুরের ডাক্তারের চিকিৎসায় সামান্যতমও ফল হয় নাই। এমতাবস্থায় নিজ বাসগৃহ হইতেই হযরত সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলাকে তাঁহার অসুখের বিষয় নিবেদন করিয়া দোয়া করিতে বিনীত ভাবে আরজ করেন ইহাতে তৎপর দিবস সকাল বেলার বহুদিনে বদ্ধ মল সম্পূর্ণ নিষ্কাশিত হইয়া খোলাসা বাহ্য হইয়া লেখক সম্পূর্ণ নিরাময় লাভ করেন।

তিনি এক সময় তালতলার ২৮ নং মার্সডেন ষ্ট্রীটের কুঠিতে স্বপরিবারে বসবাসের সময় পাশের বাড়ির দোতলার ভাড়াটিয়ার শত্রুতায় ভীষণভাবে ব্যতিব্যস্ত হইয়া পড়েন। ইহার প্রতিকারার্থে তিনি হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলার মাজারে গিয়া দোয়ার জন্য দারস্থ হন এবং প্রকৃত দোষীকে কলিকাতা হইতে চিরতরে বহিষ্কৃতের জন্য ও উক্ত বাড়ির দোতলার কর্ত্তা ব্যক্তির অপমানিত হওয়ার জন্য তাঁহার মাজারে বিনীত আরজ করেন। ঠিক একমাস পরে প্রকৃত দোষী নানারূপে শাস্তি পাইয়া কলিকাতা হইতে চিরতরে প্রস্থান করে এবং উক্ত বাড়ির দোতলার ভাড়াটিয়া কর্ত্তা ব্যক্তি সমগ্র পাড়া-পড়শী দ্বারা ভীষণভাবে সন্ত্রস্ত ও অপমানিত হন এবং পাড়া-পড়শীগণ তাঁহাকে শাসন করিয়া কড়াভাবে নির্দেশ দেন যে, ভবিষ্যতে লেখকের সঙ্গে কোনরূপ শত্রুতা করিলে তাঁহার সমূচিত ক্ষতি হইবে।

নিম্নে লিখিত কারামতটি বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার সুরেশ্বর গ্রাম হইতে হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলার খলিফা মুরিদ হযরত মাওলানা আহম্মদ আলী সাহেবের বংশধর জনাব নূরে বেলায়েত হোসেন বর্ণনা করিতেছেনঃ-
কোন এক সময় তিনি একটি কঠিন বিপদে আপতিত হইয়া হযরত সাইয়েদ আব্দুল মতিনকে তাঁহার বিপদ মুক্তি জন্য মাজার শরীফে গিয়া আরজ করিতে অনুরোধ করেন। নিজ তাঁহার লিখিত খাম-মধ্যস্থ পত্রটি লইয়া সমুদয় পত্রটি পড়িয়া তাঁহার বিপদ হইতে আশু মুক্তির জন্য বিনীত আরজ করেন। অল্পদিন পরে তিনি পুনরায় পত্র দ্বারা লেখককে তাঁহার বিপদ মুক্তি হওয়ার সংবাদ কৃতজ্ঞচিত্তে জানাইয়াছিলেন। তিনি বিপদ মুক্তি হওয়ার সংবাদ লিখিয়া যে পত্রটি দিয়াছিলেন তাহা ইংরাজী ১৯৭৩ সালের মে মাসের বাইশ তারিখে লিখিত।
(একটা বাবাকে জিজ্ঞাস করে দিয়েন)


নিম্নে কারামটি বাংলাদেশের পাবনা জেলার শাহাজাদপুর শহরবাসী জনাব মকবুল হোসেন ওরফে মুকুল মিয়া জানাইয়াছেন। ইনি হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলার খলিফা মুরিদ হযরত সাইয়েদ ওয়াজেদ আলী সাহেবের জনৈক মুরিদের বংশধরঃ-
গত ইংরাজী ১৯৭৩ সালে তাঁহার জ্যেষ্ঠ কন্যা সন্তান প্রসব করার পর ভীষণ মরণাপন্ন সুতিকা-জ্বর পীড়ায় আক্রান্ত হন ও তিনি সম্পূর্ণ পাগল হইয়া যান। তাঁহার রোগের বিস্তারিত বিবরণ লিখিয়া সাইয়েদ আব্দুল মতিনের জাঁহাগীর নিকট মকবুল হোসেন সাহেবকে পাঠাইয়া দিয়া কন্যার রোগ মুক্তির জন্য ও কন্যার বিকৃত মস্তিষ্ক সুস্থ হওয়ার জন্য মাজার শরীফে দোয়া করিতে অনুরোধ জানান। তিনি তাঁহার পত্রটি আদ্যোপ্রান্ত মাজার শরীফ পড়িয়া রুগিনীর জন্য বিনীত চিত্তে দোয়া প্রার্থনা করেন। ইংরেজী ২২/১২/৭৩ তারিখে জনাব মকবুল হোসেন পত্র দ্বারা তাকে পরমানন্দে জানান যে, তাঁহার কন্যা হুজুর ওয়াইসী ক্বেবলার অছিলায় আল্লাহর ফজলে যাবতীয় রোগমুক্ত হইয়াছেন। প্রকাশ থাকে যে তাঁহার কন্যা সমস্ত ডাক্তার দ্বারা পরিত্যক্ত হইয়াছিলেন এবং রুগিণীর স্বামীও একজন এম.বি ডাক্তার।
(একটা ও বাবাকে জিজ্ঞাস করে দিয়েন)


শাহাজাদপুরের জনাব মোহম্মদ নায়েব আলী নিম্নে লিখিত কারামতটি জানাইয়াছেন। ইনিও হযরত সাইয়েদ ওয়াজেদ আলী সাহেবের মুরিদের বংশধরঃ-
জনাব নায়েব আলী সাহেব সাইয়েদ আব্দুল মতিন জাঁহাঙ্গীরকে পত্র দ্বারা গত ইংরেজী ১৯৭৩ সালে জানান যে, তাঁহার ভগ্নি অর্থাৎ উক্ত শাহাজাদ পুরবাসী জনাব নুরুল ইসলাম সাহেবের স্ত্রী মোছাম্মাত রোকেয়া খাতুন বহুদিন হইতে নানা প্রকার রোগে,বিশেষ করিয়া হৃদ-রোগে আক্রান্ত হইয়া মরণাপন্ন হইয়াছিলেন। ইনিও সমস্ত ডাক্তার দ্বারা পরিত্যক্ত হইয়াছিলেন। সমস্ত রোগ বৃত্তান্ত লিখিয়া জনাব নায়েব আলী লেখককে পক্র দিয়া মাজার শরীফে দোয়ার জন্র অরাজ করিতে অনুরোধ করেন্ তিনি পত্রটি মাজার শরীফে পাঠান্তে রোগিণীর রোগ মুক্তির জন্য আকুল প্রার্থনা করেন। ইংরেজী ৬/১০/৭৩ তারিখে নায়েব আলী সাহেব তাঁহার ভগ্নির সম্পূর্ণ সুস্থতার কথা লিখিয়া কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও খোদার শোকর করেন এবং মাজার শরীফে অসংখ্য কদমবুচি তাঁহার তরফ হইতে জানাইতে তাঁকে অনুরোধ করেন।
(একটা বাবাকে জিজ্ঞাস করে দিয়েন)


নিম্নে লিখিত কারামত দুইটি সাইয়েদ আব্দুল মতিন জাঁহাগীর বলেছেনঃ-
যেসময় তাঁহার শশুর বাড়ির আত্মীয় শত্রু তাঁহার স্ত্রীর জমিগুলি লইয়া ছিনিমিনি খেলিয়ো তাঁহাকে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত করে, সে সময় তাঁহার চিত্ত বড়ই পীড়িত হইয়া পড়ে। চিন্তিত, ব্যথিত চিত্ত লইয়া শান্তির আশায় তিনি মাজার শরীফে গিয়া আরজ করেন যেন ক্ষতি সহ্য করার শক্তি তাঁহার হৃদয় লাভ করে। কিছুক্ষণ পরেই তাঁহার হৃদয় সমস্ত সাংসারিক ক্ষয়ক্ষতির অতীত হইয়া অনাবিল অপার্থিব নিশ্চিন্ততা লাভ করে।


নিম্নেলিখিত কারামতটি ২৪ পরগণা জেলার চুনাখালী গ্রামবাসী জনাব রুহুল আমি সাহেব বর্ণনা করিতেছেন। ইনি ফুরফুরা শরীফের পীর ক্বেবলার মুরিদ হইতেছেনঃ-
একবার এক সময় চুনাখালী গ্রামের পার্শ্ব দিয়া প্রবাহিত বিদ্যাধরী (হানানদী)। নদীটি রুদ্র-রূপ ধারণ করিয়া চুনাখালি গ্রামটি ভাঙ্গিয়া দিতে ছিল। ইহাতে ভীত হইয়া কয়েকজন প্রধান গ্রামবাসী হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলার শরণাপন্ন হইয়া ইহার প্রতিকারার্থে দোয়া করিতে বিনীত আরজ করেন। হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলা তখন বলেন যে, ‘আমি একটি পত্র লিখিয়া দিতেছি, তাহা লইয়া কোন একজন বিস্মিল্লাহ বলিয়া নদীর জলের মধ্যে প্রবেশ করিবে। সেখানে দেখিবে জ্বীনের বাদশাহ বসিয়া আছেন ও লোকজন তাঁহার আদেশে নদীর পাড়ের তলস্থ অংশ কাটিতেছে। পত্রটি লইয়া বাদশার হাতে দিয়া পুনরায় বিস্মিল্লাহ্ বলিয়া নদী তটে প্রত্যাবর্তন করিবে”। তিনি জ্বীনের বাদশাহকে পত্র লিখিয়া তাহাতে নিজনাম সহি করিয়া দিয়াছিলেন। চর্ণাখালীবাসী জনৈক সাহসী ব্যক্তি তাঁহার নির্দ্দেশ মত পত্রটি জ্বীনের বাদশাহের হাতে প্রদান করিলে বাদশাহ্ তাহা পড়িয়া পরম সমাদরে পত্রটিতে চুম্বন দিয়াছিলেন। এবং সঙ্গে সঙ্গে লোকজনকে উক্ত নদীর তলস্থ অঞ্চল না কাটিবার জন্য জরুরী নির্দ্দেশ দিয়া সকলকে আপন আপন গৃহে ফিরিতে হুকুম করেন। লোকটি তৎপর বিস্মিল্লাহ্ বলিয়া নদীর কূলে ফিরিয়া আসিয়াছিলেন। সেই হইতে অদ্যাবধি চুনাখালী গ্রামে অবস্থা অক্ষত আছে ও নদীটির  স্তোত শান্তরূপ ধারণ করিয়াছে।


নীচের কারামতটি ফুরফুরা শরীফ গ্রামের জনাব কাজী নজিবুর রহমান সাহেব বর্ণনা করিয়াছেন। ইনি হযরত ফতেহ্ আলী ওয়াইসী ক্বেবলার মুরিদ হযরত কাজী গোলাম সলমানী সাহেবের কন্যার বংশধরঃ-
হযরত মোহাম্মদ সাইয়েদ আহমদ শহীদ রায়বেরিলা ক্বেবলার খলিফা-মুরিদ হযরত হাফেজ জামালউদ্দীন ক্বেবলার সহিত হযরত সাইয়েদ ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলার আন্তরিক মহব্বত ও সখ্যতা ছিল। তাই হযরত হাফেজ সাহেব অঙ্গিকারাবদ্ধ হইতে চাহিয়াছিলেন যে, মৃত্যুর পর খোদাপাকের ইচ্ছায় উভয়ে একই গোরস্থানে পাশাপাশি অন্তিম শয্যায় শায়িত থাকিবেন। ইহাতে হযরত ওয়াইসী ক্বেবলা বলিয়াছিলেন, ‘ইনশাআল্লাহ তাহাই হইবে’। তাঁহার এই উক্তি আল্লাহপাক সফল করিয়াছেন। মানিকতলা ২৪/১ নং মুনসীপাড়া লেনের দুই নম্বর দিল্লীঅলা-গোরস্থানে তাঁহাদের মাজার পাশাপাশি বিদ্যমান আছে। সেই সময় হযরত হাফিজ সাহেব কলিকাতা সিন্দুরিয়া-পাটিতে বাস করিতেন। আর তৎকালে হযরত সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বেবলা কলিকাতা তালতলা ওলিউল্লা লেনে স্বপরিবারে বসবাস করিতেন।

Additional information