ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার কর্মজীবন

ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার কর্মজীবন

হযরত সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী ও তাঁহার বন্ধু মাওলানা মোহাম্মদ রসিদ দমদম গোরাবাজারের একটি গবেষণা কেন্দ্রে যোগ দেন। কিছুদিন পর হযরত খেজের (আঃ) সাক্ষাৎ করে বলেন, ‘তুমি কেন গবেষণা কর্মে উৎসাহী’। তুমি এই বিশ্বে আগমন করেছ গবেষক রূপে, এই পুথিবীতে তোমার অস্তিত্ব ও অবস্থান হল ‘কিমিয়া’ (রসায়ন)। তোমার প্রধান কর্ম হল মানব সমাজের মঙ্গলের জন্য কাজ করা এবং আল্লাহর অবস্থিতির নিমিত্ত মানব সমাজকে জাগ্রত করে তোলা।

অতঃপর তিনি কলিকাতা নগর দেওয়ানী আদালতে রেজিস্ট্রেশন বিভাগের প্রধান রেজিস্ট্রারের কাজে যোগ দেন। তিনি কিছুদিন এখানে চাকুরী করার পর নবাব ওয়াজেদ আলী শাহকে ব্রিটিশ সরকার যখন হায়দ্রাবাদ থেকে মেটিয়াব্রুজে অবরূদ্ধ করে রাখে ১৮৫৭ সালে সিপাই বিদ্রোহ হয়। তিনি ছিলেন বিদ্রোহের প্রধান রূপকার। যেকোন কারনেই হোক এই বিদ্রোহ অসফল হওয়ার ফলে সিপাহীদের উপর বা যারা এই বিদ্রোহকে সমর্থন করেছিল তাদের উপর এক অসহনীয় অত্যাচার নেমে আসে। এর বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হন এবং প্রতিবাদে সরকারী চাকুরী হাইকোর্টের রেজিস্টার পদ ত্যাগ করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন এবং ইংরেজদের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে নবাব ওয়াজেদ আলী শাহের প্রাইভেট সেক্রেটারীর পদ গ্রহণ করেন। তিনি নিজে একজন কবি হওয়ায় সকল মহাকবিদের ভক্তছিলেন। হযরত ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বা একজন মহান ফার্সী কবি হওয়ায় নবাব ওয়াজেদ আলী শাহ্ তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন। একটি অর্থ রসিদ থেকে জানা যায় যে তিনি ১৮৬৭ সালেও নবাবের একান্ত সচিব ছিলেন। অতঃপর তিনি পলিটিক্যাল পেনশন অফিসে সুপারিনটেনডেন্ড পদে নিযুক্ত হন। ইহার দ্বারা প্রমাণিত হয় হযরত ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বা একজন মহান দেশ প্রেমিক ছিলেন কারণ তিনি কলিকাতা হাইকোর্টের রেজিষ্টেশন অফিসের গুরুত্বপূর্ণ পদ ত্যাগ করেন। নবাব ওয়াজেদ আলী সাহেবের সঙ্গে যোগদান করা মানে শৌর্য্য এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি সহমর্মিতা ছাড়া সে সময় ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক বন্দি নবাবের অধীনে কাজ করা ছিল অসম্ভব। আর এভাবেই জনসাধারণের নিকট তিনি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে তাঁহার মানসিক সাহসিকতার স্বাক্ষর রাখেন। হায়দ্রাবাদের নবাব টিপু সুলতানের পরিবারের সকলকে যখন কলিকাতায় টালীগঞ্জে বন্দী করে আনা হয় তখনও তিনি ইংরেজদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে তাদের বাড়ীতে আনাগোনা করতেন অবাধে। কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি Part Time Lecturer ছিলেন। এটা পরিস্কার যে, তিনি মেটিয়াব্রুজের নবাব ওয়াজেদ আলী বা টিপু সুলতান পরিবার বা অন্যান্য যে সব জায়গায় যাতায়াত করতেন, এর অর্ন্তনিহিত রহস্য ছিল আলাদা। চাকুরী গ্রহণ ছিল তাঁহার লোক দেখানো। এ ইতিহাস হতে বুঝা গেল দমদম গোরা বাজারে রসায়ন বিভাগে তিনি কিছুদিন চাকুরী করেছিলেন পরে পলিটিক্যাল পেনশান অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট হিসাবেও কিছুদিন চাকুরী করেন।

নবাব ওয়াজেদ আলী শাহের স্ত্রী হযরত মহলকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ করার পেছনে হযরত শাহ্ সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) পরোক্ষ ভূমিকা না থাকার কোন কারণ নেই । ইতিহাস বলে তখন কলিকাতা, লক্ষৌ, ভূপাল, মহীশুরের নবাবদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল অতি নিবিড়।

Additional information