ওয়াইসী (রহঃ) এর পীর সূফী নূর মোহাম্মদ নিজামপুরী (রহঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

হযরত সূফী নূর মোহাম্মদ নিজামপুরী ছিলেন গজনীর সুলতানের একমাত্র পুত্র যুবরাজ বখতিয়ার কুতব আলমের সপ্তম পুরুষের বংশধর। অতি অল্প বয়সে বখতিয়ার কুতুবে আলম যখন পিতার সম্পত্তি তাঁহাকে প্রত্যর্পন করার জন্য মামাকে অনুরোধ জানালেন তখন তিনি তা তাকে প্রদান করতে অস্বীকৃত হলেন। আরও পরিতাপের বিষয় হল এই যে মামা তাঁহাকে কেবল সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলেন তাই নয়, সে দেশ থেকেও তাকে বলপূর্বক বহিস্কার করলেন। ভগ্নহৃদয়ে হযরত বখতিয়ার কুতুবে আলম নিজ পুত্র ফিরোজ শাহ্ কন্যা ময়মুনা খাতুন ও দেশের কিছু সম্মানীয় ব্যক্তিসহ দিল্লীর দরবারে চলে এলেন। সম্রাট তাঁহাকে সর্বোচ্চ সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করলেন। সম্রাট তাঁহাকে গৌড়ের অধিপতি করে দিলেন। হযরত বখতিয়ার কুতুবে আলম তাঁহার মাত্রারিক্ত ক্ষমতার স্বাক্ষর রাখেন। হযরত নিজামপুরী এই বংশেই জন্মান। তাঁহার পিতা ছিলেন মোহাম্মদ পানাহ। 

হযরত শাহ্ সূফী নূর মোহাম্মদ ১২০৫ হিজরী, ১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দে তাঁহার শিক্ষাজীবন শুরু হয় পিতার নিকট। গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষালাভের সময় হযরত শেখ জায়েদ রহমান পারগণসেরের কাছ থেকে তিনি অধ্যাত্ম শিক্ষায় দীক্ষিত হন। তারপর উচ্চ শিক্ষালাভের জন্য তিনি কলকাতায় আসেন। তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পাশ করার পর তিনি এখানেই মাদ্রাসা শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। তিনি এই শিক্ষালায় থেকেই তফসির ও হাদিস সম্পর্কিত উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। ১৭৮১ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে তিনি সকলকে শ্রদ্ধা করতেন। সর্বশক্তি আল্লাহর সেবায় তিনি নিজেকে সমর্পণ করেন। অসুস্থ ও দুর্বলকে ভালোবাসা হল মহোত্তম কর্তব্য। এক নামাজের পর তিনি অপেক্ষা করে থাকেন পরবর্তী নামাজের জন্য। তিনি সমানুযায়ী সকল কাজ করার পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি সারাজীবনে কখনও জুম্মা নামাজের আগে মধ্যাহ্ন ভোজন করন নি। হাসিমাখা মুখে সকলের সঙ্গে সদা ব্যবহার করতেন। জীবনে একাধিক বার তিনি পবিত্র হেরমাইন শরীফ (মদিনা) ও মক্কা শরীফে পরিভ্রমণ করেন।

সকল মানুষের প্রতি তিনি ছিলেন উদার দয়াপ্রবণ। ঈশ্বরের তপস্যায় তিনি সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। অসুস্থ ব্যক্তিদের সেবা যত্ন করাই ছিল তাঁহার জীবনের মহান কর্তব্য। প্রয়াতদের জানাজায় তিনি যথোপযুক্তভাবে যোগ দিতেন। এই কাজকে মহান কর্তব্য বলে মনে করতেন। তিনি সব মানুষের সঙ্গে খুশি মনে মিশতেন। তাঁহার পরিধানে থাকত সাদা চাদর ও সাদা পাগড়ি। মোর্শেদ বার হক গ্রন্থে বর্ণনা অনুযায়ী হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ নূর মোহাম্মদ নিজামপুরী রাত্রে যে স্বর্গীয় স্বপ্ন দেখেন তার বর্ণনা দিয়েছেন। পয়গম্বরর হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) তাঁহাকে এক শুভ সংবাদ দেন। পয়গম্বর (সাঃ) তাঁহাকে আদেশ করে বলেন, তাঁহার পুত্র সাইয়েদ আহমাদ কলকাতায় আসবে এবং তাঁহার হাতে বায়াত হবে। নিজের আধ্যাত্মিকতা প্রদর্শনের মাধ্যমে তিনি পীরের নিকট থেকে সর্বোচ্চ খলিফার সম্মান লাভ করবেন।

Additional information