পরলোকগমন নিয়ে তাঁর খলিফার তথ্য

পরলোকগমন নিয়ে তাঁর খলিফার তথ্য

ভক্ত ও খলিফার লেখা কাব্য থেকে তাঁহার তিরোধান বিষয়ে উল্লেখ করছি। রাসূলে নোমা হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ ফতেহ্ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার তিরোধানের দুই মাস পূর্বে তাঁহার সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী শিষ্য ও খলিফা হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ আহম্মদ আলী সুরেশ্বরী আধ্যাত্মিক শক্তি বলে পীরের জীবনাবাসান সম্পর্কে আলামত প্রাপ্ত হন।

তিনি তাঁহার গ্রন্থ “ছফিনায়ে সফর” এ সমস্ত বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি আধ্যাত্ম শক্তির মাধ্যমে তাঁহার মুর্শিদ ক্বিবলা হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) তিরোধান সম্পর্কে তাঁহার গ্রন্থে যা লিপিবদ্ধ করেছেন, সে বিষয় আমরা আলোচনা করেছি।

হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ আহম্মদ আলী সুরেশ্বরী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি দেখছেন আশ্বিন মাসে সারা আকাশে কোটি কোটি নক্ষত্রগুলি একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত অবধি এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। তাঁরা দলে দলে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসছে হেলতে দুলতে দুলতে। এসবের ব্যাখ্যা তিনি বুঝতে না পেরে তাঁহার মন অশান্ত হয়ে উঠল। অস্থির হৃদয় নিয়ে তিনি তৎক্ষণাৎ মুর্শিদ ক্বিবলা হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ ফতেহ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার দরবারে সুরেশ্বর থেকে কলকাতা যাত্রা করেন। কয়েকদিন নিজ পীর ও মোর্শেদের কাছে কাটাবার পরে স্বপ্নের বিস্তারিত হযরত শাহ্ সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) কে জিজ্ঞাস করলেন, কেন তিনি আকাশের নক্ষত্ররাশির এইরূপ প্রত্যক্ষ করলেন, যা কোনোদিন তিনি দেখেন নি। একথা শ্রবণ মাত্র হযরত ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) নীরব হয়ে গেলেন। তিনি কেবল তাঁহার চক্ষু দিয়ে অশ্র“পাত হতে দেখলেন। সেই মূহুর্তে তাঁহার তা¤্রজ্বল নূরানী মুখ মস্তকের কপালে লাল ভাঁজ পড়তে দেখলেন। সুরেশ্বরী পীর সাহেব নিকট থেকে এই সংবাদ শ্রবণ মাত্র তাঁহার উজ্জ্বল মুখটা মলিন হয়ে গেল। তিনি বিগলিত আনন্দে তাঁহার ভক্তদের আশীর্বাদ করে জানালেন পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার সময় আসন্ন। তিনি তাঁদের এই উপদেশ দিয়ে বললেন, কোনো মানুষ অমর নয়। প্রত্যেককেই এই পৃথিবী ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ্’র অনুগ্রহে সকলকেই চলে যেতে হবে। হযরত ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) যে কোনো সময়ে তাঁহার বন্ধু সর্বশক্তিমান আল্লাহ্’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রস্তুত। তাঁহার বন্ধুর সঙ্গে মিলনের জন্য অধীর হয়ে পড়লেন মানসিক দিক দিয়ে অস্থির হয়ে তিনি বললেন, ধ্রুব সত্য আমি এই পৃথিবী থেকে খুব শীঘ্র বিদায় নেব। তুমি নক্ষত্ররূপে যা প্রত্যক্ষ করেছ সেগুলি বস্তুতপক্ষে লক্ষ লক্ষ ফেরেস্তা যারা আমাকে সম্মান জানিয়ে নিয়ে যাবার জন্য স্বর্গ থেকে দলে দলে খুশীর নিশান তুলে ধেয়ে আসছে পৃথিবীর বুকে। তিনি ভক্তদের বললেন। আশ্বিন বা কার্তিক মাসে নয় ২০ শে অগ্রহায়ণের মধ্যে তিনি পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়ে পরম বন্ধু মহান আল্লাহ্র কাছে পাড়ি দিবেন।

এই সংবাদ শুনে সেইদিন থেকে একদিকে হতাশ আর অপরদিকে অত্যন্ত চঞ্চল হয়ে ভক্তরা উঠল। তাঁহার খলিফা হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ আহম্মদ আলী সুরেশ্বরী (রহঃ) সেই দিন থেকে তাঁহার জীবনের সঙ্গী হয়ে পড়লেন আর বাড়ি ফিরলেন না।

মৃত্যু পূর্ব মূহুর্ত পযর্ন্ত তিনি হযরত সুরেশ্বরী (রহঃ) সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার সঙ্গ ছাড়েননি বর্ণিত কিছু অংশ এখানে উদ্ধৃত করলাম।

“মনে আসে আশ্বিন মাসে জুড়িয়া আকাশ।
লক্ষ লক্ষ তারাগণ ছোটে পাশাপাশ॥
ঝাকে ঝাকে তারাগণ ছুটিয়া বেড়ায়।
একদিক হতে তারা আর দিকে যায়॥
আগত হইতে নিশি লাগাত প্রভাত।
দিকে দিকে তারা খেলা ছিল সারা রাত॥
ঘর বার আমাদের ছিল আগমন।
ছিল না মনের শান্তি শরীরে বসন।
হুতাসে মনের শান্তি নাশিতে কেবল॥
নিশি ভর ছিনু সবে যেমন পাগল।
অশান্তি হইল মম ধৈর্য অনুকুল॥
শান্তশীল ছিল মন হইল আকুল।
তারপরে শীঘ্র গতি কলকাতা নগর॥
সেবিবারে পীর পদ মন কলেবন।
এ বিরসে ধৈর্য সহ্য রহিল না আর॥
মনে আশা জিজ্ঞাসিব নিকটে পিতার।
একদিন জিজ্ঞাসিনু আগে শুরুপিত॥
আদেশিবে আশীর্বাদ মন আছে ভীত।
এইরূপ কেন দেখি আকাশ মন্ডলে॥
শুনি নাই দেখি নাই কভু কোনকালে।
নিরবাক্য রন পীর না করিয়া বাণী॥
আছু আখে চক্ষু হতে নিকলিল পানি।
মূহুর্তে রাহুর মেঘ এ চন্দ্র কপালে॥
পূর্ণিমাতে দাগ চিহ্ন প্রকাশিল ভালে।
অধির হইয়া পুনঃ দেন আশীর্বাদ॥
শুন শুন বৎস ধন বিদায় সংবাদ।
কেহ না রহিবে ভবে কাজা এলাহির॥
যেতে হবে একদিন ত্যাগিয়া শরীর।
বন্ধু বিনা রক্ষা যার নাহি এই ভবে॥
বন্ধুই বান্ধব তার বোলাইলে যাবে।
মিলিবারে বন্ধু সনে মনের বাসনা॥
পুরিবে মনের সাধ ঘুচিবে যাতনা।
তাই অতি শীঘ্র গতি দেল বর॥
ত্যাগিবে এ মায়া পুঞ্জ দেখিবে সত্বর।
অতএব দূতগণ ফিরিস্তা আল্লাহ্র॥
খুশীর নিশান তোলে মাফিক তারার।
লক্ষ লক্ষ দূতগণ তার আগুয়ান॥
সেই জন্য দেখ বৎস এইত সম্মান।
ভীত পদ দাস কহে করিয়া প্রণাম॥
হাফেজ জামাল তাই ত্যাগে এই ধাম।
বলে নহে বৎস ধন সে হাফেজ নয়॥
দেখিবে ক্ষণেক কালে হইবে প্রত্যয়।
একেলা আছিনু দাসে কহেন একেলা॥
একেলা সদায় মনে রহে কহা বলা।
আশ্বিনের শেষ পক্ষে মোর্শেদ আলম॥
প্রকাশিল নরাধমে আল্লার কলম।
এ ঋতু হেমন্ত কার্ত্তি যায় কাল যায়॥
আঘন আগতে শীত পাইবে না হায়।
শমন সংহারে কান্তে করিল গমন॥
বাজিলে ছফর ডঙ্কা হইবে চলন।
বাজিলে ছফর ডঙ্কা কে রহিতে পারে॥
আলবেদা আলবেদা নর কহ সমাদরে।
এক দুই তিন যায় বিগত আঘন॥
না রহিবে বিশ ক্ষেত্রে পৌছিলে শমন।
আট, নয়, দশ, যায় বিশ আঘনের॥
এ দম ভরসা শান্তি হইল আখের।
চলিল খোদার বন্ধু নিকটে খোদার॥
মূহুর্তে পরাণ পাখী ছাড়িল সংসার।
বিশেতে বিষম ক্ষেত্র উপনীত বাস॥
কাঁদিয়া অধির মন হইল তরাশ।
কি দেখিলাম কি হইলাম কি হইব আর॥
কেমনে জইবিত রব এভব সংসার।

আহা কি কমল কুঞ্জ হেরি দলে দল।
চমক আকাশ তারা যেন টল টল॥
কি সাধ হেরিতে আজ ফুলের বাগান।
এস বন্ধু দেখ আজ মম অভিমান॥
শুয়েছি মাটির তলে কবরে আমার।
ধরিছে মেঘের সাজ ফুলের গোলজার॥
যে বাগানে যেয়ে আমি লভিতাম ফুল।
সে ফুল আমার কক্ষে করিয়াছি মূল॥
দেখ এসে তামসিক ফুলের তামাসা।
ক্ষণেকে তোমার কিহে হবে এই দশা॥
ছিল যারা দেখ তারা কুসুম বিলাস।
কেহ না করিল পূর্ণ ভব অভিলাষ॥
শত শত অভিলাষী এসেছিল যারা।
এভব কুসুম কুঞ্জে রহিছে কি তারা॥

সেইদিন থেকে সর্বদা উপস্থিত থেকে তাঁহার সেবা শুশ্র“ষা করতে লাগলেন।
একদিন হযরত শাহ্ সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বাকে হুগলি জেলার তারকেশ্বর রেল লাইনের নসিবপুর স্টেশনের অন্তর্গত মোল্লাহ সিমলা গ্রামে তাঁহার এক ভক্ত আমন্ত্রণ জানালেন। হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ আহম্মদ আলী সুরেশ্বরী হযরত সূফী আবু বাকার সিদ্দিকী প্রমুখ বহু ভক্ত ও বিশিষ্ট খলিফা তখন তাঁহাকে পরিবৃত করেছিলেন। প্রথমে তিনি হযরত হাসান হালবীব মাজার শরীফ জিয়ারত করেন। তারপর তিনি তাঁহার শিষ্য খন্দকার আব্দুর রহমানের গৃহে গিয়ে বিশ্রাম নিলেন। শনিবার ১৯ শে অগ্রহায়ণ ১২৯৩ বঙ্গাব্দে মধ্যরাত্রে তাহাজ্জুদ নামাজ শেষে অসুস্থতা অনুভব করেন। তিনি উপস্থিত সকল ভক্তবৃন্দদের ডাকলেন এবং বললেন তাঁহার জীবনের শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে তাড়াতাড়ি বাড়ী নিয়ে যেতে নির্দেশ দিলেন। উপদেশ দিলেন তাঁহার জীবনাবসানের পর তাঁহার কন্যা মোসাম্মাৎ জোহরার খাতুনের কাছ থেকে নেসবতে জামেয়ার ফায়েজ যেন তাঁরা গ্রহণ করেন। আমি আমার সর্বস্ব তাঁকে দান করেছি। তারপর তিনি হযরত শাহ্ সূফী আহম্মদ আলী সুরেশ্বরীকে জিজ্ঞাসা করলেন, হযরত মাওলানা গোলাম সালমানি কোথায়, কারণ তার সঙ্গে তাঁহার কিছু আলোচনা আছে। তিনি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি ভক্তদের তৎক্ষণাৎ কলকাতায় তাঁহাকে পৌঁছে দেবার কথা বললেন, কারণ পৃথিবীতে তাঁহার থাকার আর সময় নেই। বাংলা ১২৯৩ সালে ২০ অগ্রহায়ণ, ৮ই রবিউল আওয়াল ১৩০৪ হিজরী রবিবার ইংরাজী ৬ই ডিসেম্বর ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে তিনি পরলোক গমন করেন। প্রতি বৎসর জানাজার নামাজ পড়িয়েছেন একথা কেউ উল্লেখ করেননি। তবে কি আল্লাহ্র রাসূলের মত কেউ জানাজার নামাজে ইমামতি করতে সাহস করেন নি। যে যার মত দল বেঁধে নিজ নিজ জানাজার নামাজ পড়ে চলে গেছেন। একজন ফকির এই জানাজায় উপস্থিত ছিলেন। এ ফকির কে ছিলেন ? হযরত ওয়সী করণী ? একথা শাহ্ খলিলুর রহমান নন্দনপুরী উল্লেখ করেছেন। ২০ শে অগ্রহায়ণ ১৪-১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মৃত্যুবার্ষিকী (উরস উৎসব) হযরত শাহ্ জ্বালালী পীর ক্বেবলা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত । পরবর্তীতে ১৯৮০ সাল থেকে ওয়াইসী সে মোরিয়াল অ্যাসোসিয়েশন’ তাঁহার প্রয়াণ বার্ষিক তাঁরই মাজার শরীফ উদ্যাপন করেন। কয়েক সহ¯্র ভক্ত শান্তি কামনায় সমবেত হন। ১১ ই ডিসেম্বর ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে কানুপুর লক্ষেèৗ এবং কলকাতা থেকে ‘নুরুল আনওয়ার’ সংবাদপত্রে (বর্ষ ১৬, সংখ্যা ৫০ পৃষ্ট ৫৯৩, কালাম ১) তাঁহার মৃত্যু সংবাদ প্রকাশিত হয়। কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটিতে তাঁহার মৃত্যু সংবাদ সহ বহু সম্পদ তাঁহার সম্বন্ধে গচ্ছিত আছে। সে সময় বহু সংবাদপত্রে তাঁহার মৃত্যু সংবাদ প্রকাশিত হয়।

তাঁহার ‘জানাজা’ অনুষ্ঠানে তখন বহু মহান জ্ঞানীগুণী ওলামা, সূফী দরবেশ, পন্ডিত, শিক্ষাবিদ এবং ভক্ত অংশগ্রহণ করেন। হযরত মাওলানা শাহ্ খলিলুর রহমান নন্দনপুরী শামসুল আরেফিন কিতাবে বলেন, তিনি হযরত ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার ‘জানাজায়’ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া কলকাতা চিৎপুর সিদরে পট্টীর ইমাম মাওলানা হাফেজ জামাল উদ্দিন এবং কলকাতা মাদ্রাসা’র সকল অধ্যাপকগণ ও প্রিন্স টিপুসুলতান মসজিদের ইমামদ্বয়, দেশের ও বিদেশের প্রান্ত থেকে নবাব ও নবাব জাদাগণ তাঁহার জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।

হযরত ফতেহ্ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার তিরোধানে আকাশের সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ হলে যেমন ধরনী অন্ধকার হয়ে যায়। তেমনি যারা বাংলা, আসাম, ভারত, আরব, সারা আজম অন্ধকার হয়ে গেল, পৃথিবীর ভক্তগণ মনে করল তারা যেন এতিম হয়ে গেল, আকাশে বাতাসে কারবালার মাতম শুরু হয়ে গেল সে এক করুন শোকাবহ দৃশ্য, বাংলার ঘরের মদিনার জ্যোতি আর ইহজগতে নেই। বাংলার গৌরব, চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান, আওলাদে রাসূল, হযরত সাইয়েদ শাহ্ ইমাম আল মাদানী (রহঃ) এর বংশের সুযোগ্য সন্তান হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) হেদায়েতের মশাল হাতে নিয়ে দন্ডীয়মান হতে আর দেখা যাবে না সকলেই শোকে বিহবল মূল্যমান।

ক্রমান্বয়ে তিন দিন ব্যাপী তিনবার হযরত ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। যাঁরা জানাজার নামাজে অংশ নেন তাঁরা সকলেই তাঁহার পবিত্র দেহে আকাশ থেকে এক জ্যেতির্ময় আলোকপাত হতে দেখেন এবং তাঁহার দেহ থেকেও একটা আলোর জ্যোতি বিচ্ছুরিত হয়ে আকাশের সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করছিল। সকলেই এই ঐশ্বরিক ঘটনায় হতবাক হয়ে যান। যতক্ষণ হযরত ফতেহ্ আলী ওয়াইসী ক্বিবলা কা’বার দেহ মুক্ত আকাশের নিচে শায়িত ছিল ততক্ষণ আকাশ থেকে অপ্রত্যাশিত আলোক ক্রমাগত আসছিল তাঁহার দেহের মধ্যে। মনে হচ্ছিল আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে এক অচ্ছেদ্য বন্ধু হতে চলেছে। এমন কি তাঁহার পবিত্র দেহ সমাধিতে কবরে শায়িত করবার সময়েও একই ভাবে একটা জ্যোতি বিচ্ছুরিত হতে থাকে। দেহ সমাধিস্থ হওয়ার পরও মাটির অভ্যন্তর থেকে সেই জ্যোর্তিময় আলোর ঝলকানি দেখা যেতে থাকে। জানাজার নামাজে উপস্থিত সমস্ত মানুষ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়! হায়! হায়! এই পবিত্র মানুষ যে মৃত্যুর পরও এই ভাবেই তাঁহার অলৌকিক শক্তির এ ঘটনা ঘটে যখন তিনি জীবিত ছিলেন সে সময় তিনি কি শক্তির অধিকারী ছিলেন। এরূপ ভাবতে বিস্ময় লাগে। জীবিতকালে আমরা তাঁকে চিনতে পারি নি। সকলে হায় হায় করে কেঁদে মাতম সৃষ্টি করেছিল হায় যে মানুষ মৃত্যু পরে এমন অলৌকিক শক্তির ঘটনা দেখাতে পারে তাহলে তিনি জীবিত অবস্থায় কি ছিলেন। আমরা চিনতে পারিনি। কলকাতা মানিকতলা মুনশী পাড়া কবরস্থানে তাঁকে শায়িত করা হয় মানিকতলা, লালবাগানে। মুনশীপাড়া লেনে তাঁহার মাজার শরীফ আজও বিদ্যামান। (ইং ১৮৯৮, ১৩০৮ বঙ্গাব্দে ৫ই মাঘ দিবাগত রাত্রে ১০ টার সময় হযরত ফাতেমা খাতুন হযরত ওয়াইসী পীরের জীবন সঙ্গীনি তাঁহার আদরের কন্যা তাপসী জোহরা খাতুনের ৩৫৪ বৎসরের পুরানো নবাব বাড়ীতে সালার অন্তর্গত শাহ্পুরে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন পরদিন ৬ই মাঘ তাঁহার পুত্র হযরত গোলাম মোস্তফা (রহঃ) তাঁহার মাকে শাহ্পুর থেকে নিয়ে গিয়ে পুনাশীর নিজস্ব পৈত্রিক কবরস্থানে দাফন করেন। ৩৫৪ বৎসর পূর্বে এই বাড়ী হযরত জহুরা খাতুনের (রহঃ) স্বামীর উর্দ্ধতন পুরুষ সাইয়েদ শাহ্ আতার হোসেন (রহঃ) এই ঐতিহাসিক বাড়িটি তৈরী করেন। তাঁদের বংশধর সাইয়েদ শাহ্ গোলাম রসূল ও তাঁর ভাই সাইয়েদ শাহ্ গোলাম কিবরিয়া এ তথ্য জানালেন এবং আরও তথ্য জানালেন সৌদি আরবে হাম্মাম শরীফে যে মুশাফীর খানা আছে হুজুর ওয়াইসী পীর ও তাঁদের বংশধর উর্দ্ধতন পুরুষের দান করা সম্পত্তির উপরে তৈরী হয়েছে। সেজন্য তৎকালীন আরবের বাদশা তাঁদের একটা স্বীকৃতি পত্র দিয়েছিলেন। তাঁদের বংশধরেরা কেউ আরবে গেলে তাদের থাকা খাওয়ার সমস্ত বন্দোবস্ত হাম্মাস শরীফের এই মুসাফির খানা বন্দোবস্ত করবে, তা এই স্বীকৃতি পত্রে উল্লেখ আছে। তারা আরব থেকে হিন্দুস্থানে আসার সময় সমস্ত সম্পত্তি আরব সরকারকে ওয়াকফ করে এসেছিলেন যা এ দলিলে উল্লেখ আছে।

 

Additional information