বংশধারা

বংশধারা

আরবের পবিত্র মক্কায় হযরত শাহ্ সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) এর বংশের মূল উৎস স্থল। তিনি হযরত শেরে খোদা আলী (রাঃআঃ) এবং সর্বশ্রেষ্ঠ পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানি (রহঃ) এর বংশধর। তাঁর প্রথম পুরুষ ছিলেন কোরেশ সম্প্রদায়ের হাসেমী গোত্রভুক্ত। তাঁর মা সৈয়দা সায়েদা খাতুন হযরত খাজা বাবার বংশধর। কালক্রমে এই বংশের মূল শাখা সৌদি আরব থেকে ইরাকে এবং পরবর্তিকালে ইরাক থেকে ইরানে স্থানান্তরিত হয়। কয়েক বৎসর পর এই বংশের প্রধান শাখা ইরান থেকে আফগানীস্থান, তারপর দিল্লিতে এসে বসবাস করতে থাকেন। তাঁহার প্রপিতামহের ইহধামের পরে পিতামহ দিল্লি থেকে বাংলাশের চট্রগ্রামে চলে আসেন। 

এখানেই তাঁর পিতা হযরত সৈয়দ ওয়ারেস আলী (রহঃ) জন্মগ্রহণ করেন। হযরত সৈয়দ ওয়ারেস আলী (রহঃ) তাঁর পুজনীয় পিতা হযরত ওয়ায়েস আলী (রহঃ) এর হাতে বাইয়াত লাভ করেন এবং ত্বরিকতের সাগরে অবগাহন করেন। পরবর্তিরে মুজাদ্দেদে আজম হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদ বেলরভি (রহঃ) এর শিস্যত্ব গ্রহন করে চার ত্বরিকার পূর্ন দিক্ষা লাভ করিয়া খেলাফত প্রাপ্ত হন। তিঁনি আশেকে রাসুল ছিলেন এবং হজ্বব্রত সমাপন করেছিলেন। আরবি, ফারসি ও উর্দ্দুতে তিঁনি ছিলেন সুপন্ডিত। তিনি ছিলেন হাদিস বিশারদ। বাংলাদেশের চট্রগ্রামেই তার বিবাহ সম্পন্ন হয়। তিঁনি ফোর্ড উইলিয়াম কলেজের ফার্সী বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।

শাহ্ সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) এর মা সৈয়দা সায়েদা খাতুন ছিলেন পবিত্র কোরানের হাফেজ ও ক্বারী। তিঁনি আরবী, উর্দ্দু ও বাংলা ভাষা জানতেন। তিঁনি ছিলেন দানশীলা, আল্লাহ্র অলী ও শুদ্ধা নারী। তিঁনি তাঁর যোগ্য স্বামীর  হাতে বাইয়াত গ্রহন করেন। 

হযরত সৈয়দ ওয়ারেস আলী (রহঃ)  প্রথম সন্তান কন্যা। তাঁর নাম হযরত সৈয়দা সালেহা খাতুন (রহঃ), যিনি পিতার নিকট মুরিদ হয়েছিলেন এবং কামালিয়াতের সোপনে উপনিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন পবিত্র কোরানের হাফেজ। হযরত সৈয়দ ওয়ারেস আলী (রহঃ)  ২য় সন্তান হযরত শাহ্ সৈয়দ সালেহ আলী (রহঃ) তিঁনিও পিতার নিকট ত্বরিকা নিয়েছিলেন এবং খেলাফত প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তিনিও ছিলেন পবিত্র কোরানের হাফেজ। হযরত সৈয়দ ওয়ারেস আলী (রহঃ) এর ৩য় বা শেষ সন্তান হযরত সূফী ফতেহ্ আলী।

সম্ভাবত ১৮০০/০৬ সালে চট্রগ্রামের আমির বাজারের অন্তর্গত সাতকানিয়া গ্রামে সৈয়দ পাড়া মহল্লায় হযরত সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী ভূমিষ্ট হয়। কোন কোন লেখকের অভিমত তাঁর আবির্ভাব কাল ১৮২৫ সালে। আবার অনেকে বলেন তাঁর পিতা যখন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ১৮২৬-৩১ সালে পীর হযরত সৈয়দ আহমাদ বেলরভি (রহঃ) এর সাথে যে যুদ্ধ হয় সেই যুদ্ধে মারা যায়। সম্ভাবত ১৮০৬-০৭ সালে তাঁর পরিবার চট্রগ্রাম হতে কলিকাতায় স্থানান্তরিত হয়।

তাঁর পিতার মৃত্যুর পর তাঁর মাতা পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে হজে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু যখন তারা জাহাজে সাগর মোহনা অতিক্রম করছিলেন তখন জাহাজ ডুবি হয়ে সকলে ভেসে যান। কেবলমাত্র আল্লাহ্র রহমতে সূফী ফতেহ আলী (রহঃ) আশ্চার্যজনক ভাবে রক্ষা পায়। উপায়ন্তর না থাকায় তিঁনি কলিকাতা সিটি কোর্টের (পুনাশী, মুর্শিদাবাদ) এ্যাডভোকেট জনাব মুনসি মুহাম্মদ সেলিম এর আশ্রয় গ্রহন করেন।  ধারনা করা হয় যখন তিঁনি তাঁর মাতার সাথে হজ্ব যাত্রা করেন তখন বয়স ১৬ থেকে ১৮ বৎসর ছিল। ১৮৮৬ সালে ১১ ডিসেম্বর হযরত শাহ্ সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) এর তিরোধান সংবাদ কলিকাতা ও লক্ষী থেকে প্রকাশিত ফার্সী নূরুল আনওয়ার কাগজে ছাপা হয়েছিল। ওফাতের সময় তাঁর বয়স ছিল ৭০ বৎসর। সেই মতে অনেকে হযরত শাহ্ সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) এর জন্ম ১৮১৬ সালের আগে বলে মনে করেন। সুতারাং যারা মনে করেন তাঁর জন্ম ১৮২৫ সালের পর তা হওয়ার সম্ভাবনা কম। 

তিঁনি যখন তাঁর মাতৃগর্ভে ছিলেন তখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর খলিফাগণ, হযরত খেজের (আঃ) এবং তরিকার ইমামগণ স্বপ্ন যোগে বা ইলহাম মারফত তাঁর মাতা পিতাকে এবং তাঁর পীর ও মোর্শেদকে হযরত শাহ্ সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) এর আবির্ভাব সম্পর্কে সুসংবাদ দান করে বলেছিলেন তিঁনি হবেন রাসুল প্রেমিক।  

হাওড়া মুনশীর হাট তিঁনাদের নামে। কয়েক হাজার একর সম্পত্তি ওয়াক্ফ করা আছে সূফী ফতেহ্ আলী (রহঃ) ও তাঁর কন্যা হযরত জহুরা (রহঃ) এর নামে।  

Additional information